৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইরান কোনোভাবেই আগ্রাসী নয়

-


গত শনিবার রাতে ইরান প্রায় সাড়ে তিন শ’ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলে। এতে শুধু একটি বিমানঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে ইসরাইলের। জানমালের ক্ষতির কোনো কারণও ছিল না। কারণ ইরান সেটি চায়নি। তারা এমনকি অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো লক্ষ্যস্থলেও হামলা করেনি। বরং আগে থেকে বলেকয়েই এই হামলা চালিয়েছে। রয়টার্স নিশ্চিত করেছে, ইরান কয়েক দিন আগেই ইসরাইলকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল।
এই হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ দুই পক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের কোনো পাল্টা হামলায় যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসরাইলের পাঁচ সদস্যের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভা বা ওয়ার ক্যাবিনেট ইরানের হামলার জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরাইল যদি পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত না-ও নিত তাহলেও এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। কারণ বর্তমান নেতানিয়াহুর সরকার হলো দেশটির সর্বকালের সবচেয়ে কট্টর ও বিদ্বেষপরায়ণ।
অথচ বাস্তবে, ইরানের এই হামলাটিই একটি পাল্টা বা জবাবি হামলা। চলতি মাসের শুরুর দিনে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে ইসরাইল দুই শীর্ষ কমান্ডারসহ ইরানের সাত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। সেই হত্যার পাল্টা হিসাবেই শনিবার এই হামলা চালায় ইরান। বিস্ময়কর হলেও সত্য, ইরানিরা ইসরাইলের কাউকে হতাহত করতে চায়নি।
অনেকের ধারণা, ইসরাইলের পাল্টা জবাবের ধরন কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করছে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে। কারো ধারণা, এই মুহূর্তে সংযত থাকার কৌশল নিয়ে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত চুক্তি করতে চায় এবং তা করতে চায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে কোনো রকম প্রতিশ্রুতি না দিয়েই। পরিস্থিতি সেদিকেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইরানের হামলা নিয়ে ইরানিদের মধ্যে যেমন উল্লাস দেখা গেছে, তেমনই মুসলিম বিশ্বের অনেকেই তাদের সন্তুষ্টি আড়াল করেননি। কিন্তু এটি বোকার হাসির মতো। ফিলিস্তিন ইস্যু আবারো মাটিচাপা পড়ে গেলে গত সাত মাসে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের যে ৩৩ হাজার মানুষ শহীদ হলেন, যে পৌনে এক লাখ মানুষ পঙ্গু হলেন, গাজার প্রায় প্রতিটি মহল্লা যে মাটিতে মিশে গেল এসব আত্মত্যাগই নিছক অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না। এর সাথে গত ৭৫ বছর ধরে নিপীড়িত নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় লাঞ্ছনা ও অপমানের পুরোটাই তো পর্যবসিত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমোঘ বাণী ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে/বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’র আক্ষরিক রূপায়ণ।
এটি ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে ইউরোপ মুখে যতই শান্তি সংযম সহাবস্থানের কথা বলুক না কেন, তারা সবাই ইসরাইলের সমর্থক এবং ঘোরতর মুসলিমবিদ্বেষী। ইরানের হামলার নিন্দা জানাতে জি-৭ দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা যে সুসমন্বিত ও একপেশে বক্তব্য রেখেছেন তাতেই সবটা স্পষ্ট। ইরানের বিরুদ্ধে সব দেশ একাট্টা। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স শনিবার রাতে ইরানি হামলা প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ নিয়েছে। এমনকি জর্দানও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে ইসরাইলকে সাহায্য করেছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন তুরস্ক বা চীন টুঁ শব্দটি করেনি। অথচ ইরানের যে পাল্টা হামলার অধিকার আছে সেই কথাটি তো বলা দরকার ছিল।
যা হোক, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খাদের কিনারে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, অঞ্চলটিকে খাদের কিনারা থেকে ফেরাতে হবে এখনই। আমরাও তেমনটাই মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement