৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি

স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ

-


চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম একটি। কিন্তু আমাদের দেশে এই বাস্তবতা অনুপস্থিত। কারণ, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক সঙ্কট তীব্রতর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মান অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন চিকিৎসক থাকতে হবে। অথচ দেশে ৯ হাজার ৪৩৩ জন মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেলায় এ অনুপাত ১:১১,৬০৫। ফলে আমাদের জনস্বাস্থ্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ দুর্বল। উপরন্তু গ্রামীণ জনপদে সরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে অবকাঠামো ঠিক থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকছে। এ জন্য তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজমান রয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসক না বসায় ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চান না গ্রামের লোকজন। স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের ছুটতে হয় শহরে।

জনবল কাঠামো অনুযায়ী, ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (এসএসিএমও), ফার্মাসিস্ট, এমএলএসএস/অফিস সহায়ক ও মিডওয়াইফ (নার্স) থাকার কথা। এই পাঁচটি পদ ছাড়াও কেন্দ্রগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এফডব্লিউভি (পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা) ও আয়ার দু’টি পদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনবল অনেক কম। কোনো কোনোটিতে বাস্তবে দুই-একজন ছাড়া আসলে আর কেউ কর্মরত নেই।
এমন প্রেক্ষাপটেও দেশে গ্রামাঞ্চলে সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়নে অবস্থিত উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গ্রামীণ জনপদের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। সেখানে থাকতে চান না কোনো চিকিৎসক। লক্ষণীয়, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক থাকা না থাকার বিতর্কটি দীর্ঘদিনের। নতুন একটি গবেষণা বলছে, গ্রামাঞ্চলে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক যাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে, তারা কর্মক্ষেত্রে বেশি অনুপস্থিত থাকেন।
সরকারি চাকরি পাওয়ার পর পদায়ন করা এলাকায় দুই বছর কাজ করা চিকিৎসকদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২৬ শতাংশ চিকিৎসক তা করেন না। ৬৫ শতাংশ চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নেয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রামে কাজ করতে পারেন না। ৪১ শতাংশ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন পারিবারিক কাজে।

তবে ৯৬ শতাংশ চিকিৎসকের দাবি, তারা গ্রামাঞ্চলে কাজের সময়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাহীন পরিবেশ, গালমন্দ শোনা, অন্য স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি থাকায় অনেক চিকিৎসকের পরিবার, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা নেয়া এবং প্রতিবেশী বা সহকর্মীদের সাহায্য চাইতে হয় তাদের। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে সব চিকিৎসককে গড়পড়তা দোষারোপ করা সমীচীন নয়। দেখা যায়, গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের ঘাটতি সত্ত্বেও কিছু চিকিৎসক কর্মস্থলে থাকেন এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখেন।
গ্রামের মানুষদের মতো আমরাও মনে করি, প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপিত সরকারি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকে। অন্ততপক্ষে একজন চিকিৎসক নিয়মিত না হলেও সপ্তাহে অন্তত দু-তিন দিন যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা দেন; তাহলে ওই এলাকার সেবার চিত্র পাল্টে যেতে পারে। সাধারণ মানুষকে কষ্ট করে আর দূরের হাসপাতালে গিয়ে সময় অর্থ নষ্ট করতে হবে না। সেই সাথে ভুল বা অপচিকিৎসার শিকারও হতে হবে না তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement