৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পবিত্র ঈদুল ফিতর

এক কাতারে ধনী-গরিব

-

‘ঈদ’ মানে আনন্দ। পবিত্র ঈদুল ফিতর প্রতি বছর খুশির বারতা নিয়ে ফিরে আসে আমাদের মাঝে। শাওয়ালের নতুন চাঁদ তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে বহুল প্রত্যাশিত। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়ালের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে আগামী বুধ অথবা বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ জন্য শাওয়ালের চাঁদ মুসলিম উম্মাহর অতীব কাক্সিক্ষত।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর আমরা উদযাপন করি ঈদুল ফিতর। এ জন্য রমজানের সিয়াম সাধনার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক এ উৎসবের আমেজে। রোজার ত্যাগ-তিতিক্ষার শিক্ষা চারিত্রিক উন্নতি বিধানে অনন্য প্রশিক্ষণ। তার প্রতিফলন থাকা বাঞ্ছনীয় ঈদ উৎসবে। সমাজের ছোট-বড় সবাই যেন এক কাতারে ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ পান, পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন। সেই সাথে আমাদের প্রত্যাশা, বৈষম্যহীন সামাজিক ন্যায্যতা যেন সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। সেই মানবিক উপলব্ধি না হলে ঈদের আনন্দে পূর্ণতা আনা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সবার মধ্যে ঈদুল ফিতরের সেই পরিপূর্ণ ও প্রকৃত সুখবোধ ছড়িয়ে দিন, আজকের দিনে এমন প্রার্থনা। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, ঈদ আর দশটি উৎসবের মতো নয়, এটি ধর্মীয় সংস্কৃতিকেন্দ্রিক উৎসব। উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি বা স্থূলতা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার কর্তব্য।
এ দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের বাস গ্রামে। শহরকেন্দ্রিক মানুষজন এখনো ছুটে যান গ্রামের বাড়ি। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও উপভোগের রেওয়াজ আমাদের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। স্বজনের টানে ছুটে চলা মানুষ এখনো তাদের সান্নিধ্য পেতে চান। এর মানবিক ও সামাজিক আবেদন বিপুল। এ ঐতিহ্য লালনে আমাদের পারিবারিক বন্ধন শুধু দৃঢ় হয় না; বৃহত্তর সামাজিক ব্যবস্থা বিলুপ্তির মোকাবেলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব। জীবনঘনিষ্ঠ এ উৎসবে নির্মল আনন্দ উপভোগ করেন সব শ্রেণীর মানুষ। ধনী-গরিব ব্যবধান ভুলে সবাই ঈদের আনন্দে শরিক হন। রোজাদার ঈদের নামাজে শরিক হওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে থাকেন। উৎসব হিসেবে ঈদ এতটা সর্বপ্লাবী যে, এটি অতুলনীয়। ঈদ যেন মুসলিম জীবনে অনিঃশেষ আনন্দের ফল্গুধারা। দুঃখ-বেদনা, শ্রেণিবৈষম্য ও আশরাফ-আতরাফের ব্যবধান ভুলে মানুষ সাময়িকভাবে হলেও এক কাতারে দাঁড়ান ঈদের দিন। একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে যান। তাই ঈদের তুলনা শুধু ঈদ, আর কিছু নয়।
আমরা যখন ঈদ আনন্দ উপভোগ করব, তখনো পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মৃত্যুর প্রহর গুনবেন। সেসব অসহায় লাখো নর-নারী-শিশুর কান্নার ধ্বনি আমাদের ব্যথাতুর করে তোলে। দেশে দেশে মজলুম মানুষের আহাজারি শুনে আমরা অসহায় বোধ করি। তার পরও উম্মাহর দুয়ারে ঈদ হাজির হয় খুশির বারতা নিয়ে। ঈদের আনন্দে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব না হলেও তাদের বিপদ মুক্তিতে আল্লাহর দরবারে দোয়া করব আমরা। বিশেষ করে সব বিপদ-মুসিবত থেকে আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রাখুন।
ঈদ আমাদের জীবনে অর্থবহ আনন্দ বয়ে আনুক। তাৎপর্যময় হোক এই উৎসব। জাতীয় জীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়–ক। এ প্রত্যাশায় সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা; ঈদ মোবারক।


আরো সংবাদ



premium cement