৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা

দলীয় লোকদের সীমা ছাড়া বাড়াবাড়ি

-

পুলিশ ও সরকারি দলের রাজনীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দেশের প্রায় সব এলাকা অনেকটা যেন কথিত রাজনৈতিক নেতাদের অধীনে শাসিত হচ্ছে। পুলিশ ওই নেতার অধীনস্থ একটি বিভাগ হিসেবে দায়িত্বরত বলে অনুমান হয়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তাদের যৌথ স্বার্থ সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। এর ফল হয়েছে ক্ষমতাহীনরা শোষিত বঞ্চিত হচ্ছেন আরো বেশি মাত্রায়। তারা প্রতিকার বা আশ্রয় পাচ্ছেন না। বিরোধী নেতাকর্মীর পরিবারের জীবন ও সম্পদ এ অশুভ মৈত্রীতে বেশি অসহায়। তবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা নিজেরা একে-অপরের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে লিপ্ত হয়। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুরে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা থানায় হামলা চালালে আট পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুনকে গ্রেফতার নিয়ে। গত শনিবার রাতে স্থানীয় আড়িয়া বাজার থেকে তাকে মদ্যপ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুন-মাদক, চোরাচালানসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মাজিড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: নুরুজ্জামান। শাজাহানপুরে ‘নুরু বাহিনী’ নামে একটি অপরাধী দলের প্রধান তিনি। মিঠুনকে ছাড়াতে ৪০-৪৫ জনের একটি দল নিয়ে শাজাহানপুর থানায় চড়াও হন।
তারা দায়িত্বরত পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে আসামিকে ছেড়ে দিতে। এ অবস্থায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় উপস্থিত হন। তিনি নুরুজ্জামানকে থানা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এতে নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে তার লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তবে পুলিশের প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যায়। এরপর ২০০-২৫০ জনের একটি দল নিয়ে শতাধিক মোটরসাইকেলে থানার অদূরে সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিতে গেলে লাঠিসোটা ও পাইপ নিয়ে উল্টো হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নুরুজ্জামানসহ আটজনকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসীদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালায়। ১৫টি গুলিসহ দু’টি বিদেশী পিস্তল জব্দ করে পুলিশ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে এ বিবরণ পাওয়া গেছে। এগুলো মূলত পুলিশের বক্তব্য। তবে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর নানা অপরাধ, সন্ত্রাস ও পুলিশ পেটানোর ঘটনা অবিশ্বাস করার মতো কিছু নয়। সারা দেশে ক্ষমতাসীনদের সাথে পুলিশের যে অলিখিত মৈত্রী তা কিছু ক্ষেত্রে তিক্ত হতে বেশি সময় লাগে না। ফলে নিজেদের মধ্যে সেটা ভয়াবহ দ্বন্দ্বের রূপ নিচ্ছে প্রায়। খোদ আইনপ্রণেতারা এ দেশে থানায় বোমা হামলার হুমকি দেন। ওসির হাত কেটে ফেলার ভয় দেখান। ক্ষমতার ওপরের স্তরের লোকদের এ ধরনের নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবে না। তবে বগুড়ায় থানায় হামলার ঘটনাটি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এটা তারা করতে সাহস পেয়েছে এ কারণে যে, তারা জানে এতে তাদের কিছু হবে না। ক্ষমতা তাদের অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই দেবে। পুলিশ আপাতত তাৎক্ষণিক কিছু অভিযান চালাচ্ছে সেখানে। বাস্তবতা হচ্ছে এই অপরাধীরা বছরের পর বছর পুলিশের সামনে নানা অপরাধ অসামাজিক কাজ করে গেছে। উদ্যোগী হয়ে এসব অপরাধীকে তারা দমন করেনি বা করতে পারেনি। এখন তা করেছে যখন নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ বাধায়। এমন বিরোধ অনেক সময় ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হয়ে থাকে।
পুলিশকে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর শক্তি প্রদর্শন করতে দেখা যায়। দেশের পুলিশ যে অত্যন্ত সক্ষম শুধু তখন মনে হয়। কিন্তু সরকারি দলের লোকজন যখন তাদের ওপর চড়াও হয়; তখন তাদের দুর্বল মনে হয়। সারা দেশে এর বহু নজির রয়েছে। এজন্য সরকারি দলের লোকেরা থানা আক্রমণের মতো রাষ্ট্রদ্রোহী ঘটনা ঘটিয়েও পার পাচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement