২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রতারণার নতুন কৌশল মাইন্ড কন্ট্রোল

এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

-

সমাজে আইনশৃঙ্খলা অটুট থাকলে জালিয়াতরা সুযোগ খুব থাকে না। কিছু দেশ আছে প্রতারকদের জন্য অভয়ারণ্য বলতে হবে। এমন একটি দেশ বাংলাদেশ। যেকোনো ধরনের নব-আবিষ্কৃত প্রতারণা চর্চায় প্রতারকরা বাংলাদেশকে বেছে নেয়। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ নানা ধরনের ডিজিটাল জালিয়াতি এখানে অবাধে হয়েছে। বিদেশীরা এসেও এখানে চক্র গড়ে তোলে এ জন্য। এখনো এ প্রতরাণা চলছে। ছিনতাই, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য আগে থেকে রয়েছে। নতুন করে শুরু হয়েছে মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ দিয়ে অর্থকড়ি মোবাইল সেটসহ মূল্যবান বস্তু হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সহযোগী একটি দৈনিকে দু’টি জালিয়াতির ঘটনার খবর দিয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর একজন গৃহিণী। তিনি মহাখালীর আমতলী থেকে জিরাবো যাচ্ছিলেন। বাসে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার সাথে পরিচিত হয়। একপর্যায়ে সে গৃহিণীকে একটি কলম দেয়। কলম হাতে নেয়ার পর তিনি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তির কথায় তিনি সায় দিতে থাকেন। এ সময় ওই নারীর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। তাকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সময় কাটায়। এর মধ্যে ফোন দিয়ে চক্রের বাকি সদস্যরা তার ছেলেকে জানায়, তার মাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হুমকি দেয়া হয়- গুরুতর মামলায় চালান দেয়া হবে। তার কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়। অন্যদিকে ছেলে তার মাকে বাঁচাতে বিকাশে ৫৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাঠায়। নগদ অর্থ জোগাড় করতে না পারায় আর পাঠাতে পারেনি। এদিকে গৃহিণীকে প্রতারকরা পল্লবীতে ছেড়ে দিলে পথচারীর মাধ্যমে ছেলেকে ফোন করে তার অবস্থান জানালে পরিবারের উদ্বেগের অবসান ঘটে।
অভিযোগের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারকরা বাসে একা চলাচলরত নারীদের নিশানা করে। পাশের সিটে বসে কৌশলে তাদের সাথে আলাপা জুড়ে দেয়। একপর্যায়ে বিশেষ ধরনের কলম উপহার দেয়। তাতে মেশানো থাকে চেতনানাশক। কলমটি স্পর্শ করলে চিন্তাশক্তি লোপ পায়। এ সময় ভুক্তোভোগী প্রতারকদের কথামত কাজ করেন। এ সুযোগে সব লুটে নিয়ে বাস থেকে নামিয়ে প্রতারক চক্র অন্য সদস্যের কাছে নিয়ে যায়। শুরু হয় প্রতারণার দ্বিতীয়পর্ব। মোবাইল ঘেঁটে আত্মীয়স্বজনের নম্বর নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে ভীতি প্রদর্শন করে। মাদক ও জাল টাকা কিংবা অন্য কোনো জালিয়াতির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়ে অর্থ দাবি করা হয়। স্বজনরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নগদ টাকা দিয়ে দেন।
পত্রিকাটি একই ধরনের আরেকটি জালিয়াতির বিবরণ দিয়েছে। হাঁটতে বের হওয়া এক ব্যক্তির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি সিএনজি। তার ভেতরে দু’জন যাত্রীবেশে ছিল। চালক বের হয়ে তাকে একটি টাকার নোট দিয়ে সেটি সম্পর্কে জানতে চায়। সেটি স্পর্শ করার পরপর ওই ব্যক্তি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারান। জালিয়াত চক্র তাকে ব্যাংকের এটিএম বুথে নিয়ে যায়, এমনকি তাকে নিয়ে ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয় তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনে। হুঁশ হারানো ব্যক্তি এ চক্রকে টাকা তুলে দিতে উদগ্রীব ছিল। তবে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ থাকায় টাকা তোলা সম্ভব হয়নি।
একটি ড্রাগ দেহে প্রবেশ করিয়ে মানুষকে হিপটোনাইস করা হয়। ড্রাগটি তরল কিংবা পাউডার অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। ছয় থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্বে থেকে শ্বাস প্রক্রিয়ায় মানুষকে এটি আক্রান্ত করে। হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও এটি হতে পারে। এক ঘণ্টার মতো এর প্রতিক্রিয়া থাকে। মলম পার্টির নতুন একটি সংস্করণ এটি। তবে এতে ভুক্তভোগীর আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। এ চক্র এখনই নির্মূল করতে হবে। অন্যথায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement