৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাটছাঁটেও সঙ্কুলান হচ্ছে না

সাধারণের ঈদ-আনন্দ ম্লান

-

সরকারের দাবি, দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। যার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? কিছু বড় স্থাপনা তৈরি করা হলেই কি দেশের উন্নয়ন হয়। সমাজে আয়বৈষম্য কমে? সবার জীবনমান সমান হয়? সবাই জানি, দেশে মুষ্টিমেয় মানুষ ছাড়া বাকি সবারই জীবন এখনো বিবর্ণ ও একঘেয়ে।
সরকারের উন্নয়নের বয়ান যে অন্তঃসারশূন্য, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক মন্দাই তা বলে দেয়। বাস্তবে সরকারঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী ছাড়া বাদবাকি সবাই এখন চরম অর্থকষ্টে নিপতিত। উপরন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ফলে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র কেনা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। শুধু জীবন ধারণের জন্য যতটুকু না হলেই নয় তাই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অবস্থা খুবই করুণ। তারা কোনোমতে টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত। এমন প্রেক্ষাপটে আর ক’দিন পর আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অর্থসঙ্কটে ঈদের কেনাকাটা করতে খুব বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত এবং সাধারণ মানুষকে। পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে না পেরে মনোজ্বালায় ভুগছেন তারা। এতে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। আর্থিক দৈন্যে সাধারণের ঈদ-আনন্দ ম্লান হতে বসেছে।

অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় এবার দেশের বেশির ভাগ মানুষ ঈদ উৎসবে তেমনভাবে শামিল হতে পারবেন বলে মনে হয় না। কাটছাঁট করেও ঈদবাজেট সঙ্কুলান করা সম্ভব হচ্ছে না নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীসহ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের। এ অবস্থায় অসহায় বোধ করছেন তারা।
ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে জিনিসের দাম দেখে অনেক ক্রেতা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, কাপড়ের বাড়তি দামে কাটছাঁট করেও বাজেট সঙ্কুলান সম্ভব হচ্ছে না। পোশাক, জুতা থেকে শুরু করে প্রতিটি ঈদপণ্যের দাম বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ৩০-৪৫ শতাংশ। যার কারণে কেনাকাটা করতে এসে বাজেটে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাদের ভাষ্য, আগে চারজনের পরিবারে যে টাকায় ঈদ বাজার হতো এখন তা দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি; বরং প্রতিটি পরিবারে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে মার্কেটে এসে দাম দেখে অসহায়বোধ করছেন বেশির ভাগ ক্রেতা।

চাহিদার ন্যূনতম পূরণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন কোথা থেকে কী করবেন সাধারণ ক্রেতা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর নির্দিষ্ট ও সীমিত আয়ের চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অসুবিধা আরো বেশি। এ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরা কারো কাছে বলতেও পারেন না। আবার সইতেও পারছেন না। আসলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ অর্থকষ্টে পড়ায় ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজনের মন রক্ষা করতে পারছেন না। মুখে হাসি ফোটানো তো দূরের কথা। সেই সাথে সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবেন তা নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা।
সব কিছুর দাম এরকম লাগামহীন চলতে থাকলে একসময় সাধারণ মানুষের ঈদ-বাজার বলে কিছু থাকবে না। ঈদ-উৎসব বা আনন্দ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তখন ঈদ-আনন্দ বর্ণিল না হয়ে ম্লান হতে বাধ্য।


আরো সংবাদ



premium cement