৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বন্দী রেখে মাসাধিককাল ধর্ষণ

শাস্তি পাওয়ার শঙ্কা করে না অপরাধীরা

-

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নড়বড়ে অবস্থা দুর্বলদের নিরাপত্তা ঠুনকো করে দিচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় শিকার নারী। প্রতিদিন নারীরা নানা কায়দায় অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পারিবারিক নারী নির্যাতনের ৯৭ শতাংশের কোনো প্রতিকার হয় না আমাদের দেশে। তার পরও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ৬৪টি জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ২১৮টি। তবে গুরুতর ধর্ষণের ঘটনাও প্রতিদিন এ দেশে ঘটে চলেছে। মনে হচ্ছে, পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতা ধর্ষকদের জন্য বাড়তি সুযোগ দিচ্ছে। পণবন্দী করে মাসের পর মাস আটকে রেখে ধর্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কোনো ধরনের আশঙ্কাবোধ করছে না ধর্ষকরা।
এবার রাজধানীতে এক মাস আটকে রেখে এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে তিনি টানা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শিকলে বেঁধে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। শুধু ধর্ষণ নয়, এ থেকে তারা ব্যবসাও ফেঁদেছে। পর্নো ভিডিও বানিয়ে তা থেকে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেছে। দেশে এখন অশ্লীলতার চর্চা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনও বেড়েছে। ভুক্তভোগী তরুণীর মা-বাবা ছিল না। এই সুযোগে এক প্রবাসী তার সাথে লিভ টুগেদারের সুযোগ নেয়।
ওই প্রবাসী দেশ ছেড়ে গেলে তরুণী আরেক যুবকের সাথে প্রেমে জড়ায়। ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটি চক্রকে দিয়ে বন্দী করে ধর্ষণের আয়োজনে সহযোগী হয় প্রবাসী। এরপর ধর্ষণের পর্নো ভিডিও দিয়ে ব্যবসায় করে। এই তরুণীর জীবন হয়তো ওই বাসাতে ধর্ষিত হতে হতে শেষ হয়ে যেত, যদি তিনি কাকতালীয়ভাবে উদ্ধার পাওয়ার সুযোগ না পেতেন। ধর্ষক চক্র তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাইরে গিয়েছিল। তিনি জেগে উঠে দেখতে পান, বাসা ফাঁকা, তখন জানালা দিয়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জরুরি নাম্বারে ফোন দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
কয়েকজন আসামিকে পুলিশ আটক করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানাচ্ছে, এ কাজে তাদের সহযোগী নারীও রয়েছে। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় তারা ধর্ষক চক্রের সহযোগী হয়েছে। এ ধরনের একটি জঘন্য কর্ম একা এই চক্রের পক্ষে করা মুশকিল ছিল। এই নারীরা ওই পৈশাচিক ঘৃণ্য কর্মকে সহজ করে দেয়। মানবপাচার, মাদক চোরাকারবারি, নারী পাচারসহ দেহ ব্যবসায় এক শ্রেণীর নারী জড়িয়ে পড়েছে। এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ দেশের নারীরা ছিল অন্যের ব্যথায় ব্যথী, সহনশীল। দুর্ভাগ্য, সমাজে অন্যায় অনিয়ম ও দুর্নীতির প্লাবনে আমাদের নারীসমাজও বিগড়ে যাচ্ছে। তারাই নিজেদের নারীজাতির জন্য হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি সামনে আরো নড়বড়ে হয়ে উঠবে। তাই ধারণা করা যায়, নারী নির্যাতনের ঘটনা এতে আরো বাড়বে।
বর্তমান সরকারের সময়ে বিচারপ্রাপ্তি নিয়ে দেশে হতাশা তৈরি হয়েছে। শক্তিহীন বা কমজোর মানুষ বিচার পাচ্ছে না। কেবলমাত্র শক্তিশালী বা ক্ষমতার আশপাশের লোকদের জন্য বিচারের কাক্সিক্ষত গতি রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নিয়ম রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে রায় হচ্ছে না। মেডিক্যাল সনদ, ডিএনএ প্রতিবেদন কিংবা সাক্ষ্য গ্রহণের নামে তদন্ত কর্মকর্তার গড়িমসি বিচার বিলম্বিত করে। এই আদালতে থাকা ২১ শতাংশ মামলা পাঁচ বছর ধরে বিচারাধীন। ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন ঠেকাতে হলে দরকার উপযুক্ত শাস্তি কার্যকর। আমাদের পক্ষপাত জর্জরিত বিচারব্যবস্থায় তা হচ্ছে না। ফলে ধর্ষকদের এমন বাড়ন্ত অবস্থা।


আরো সংবাদ



premium cement