৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে

-

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। মূলত পাঠ্যপুস্তক ও পাঠপদ্ধতি নিয়ে বেশি অভিযোগ। প্রয়োজনীয় দক্ষতা-যোগ্যতার চেয়ে পাঠে জোর দেয়া হয়েছে মোটিভেশন। এ জন্য নির্ভুল পুস্তক রচনা করা যায়নি। অন্যদিকে শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতিতেও গলদের কথা বলা হচ্ছে। এবার একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষাব্যয় বেশ বেড়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলেও অভিভাবকদের আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের জন্য এটি একটি দুর্ভাগ্য।
মহামারী-উত্তর শিক্ষা নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হয়। এতে আটটি বিভাগের ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৫ জনের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে দেশে প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ১৮২ টাকা। পরের বছর ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে শিক্ষার্থীপ্রতি এ খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে আট হাজার ৬৪৭ টাকা। ২০২২ সালে মাধ্যমিকের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এটি ৫১ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ৭১২ টাকা হয়েছে। গত বছরের শেষ ছয় মাসের হিসাব যদি করা যেত ব্যয় বৃদ্ধির হার সম্ভবত আরো বেশি পাওয়া যেত।
ব্যয় বৃদ্ধির কারণ দেখা যাচ্ছে, প্রাইভেট টিউশন খরচ ও গাইড বই ক্রয়। মহামারী-পরবর্তী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৭৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের সহায়তা নিয়েছে ও কোচিং সেন্টারে গেছে। অথচ শিক্ষার নিচের দিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। স্কুল ফিডিংয়ের মতো কার্যক্রম নেয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে শিক্ষা সম্পন্ন করে। বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেটে যেতে হচ্ছে। অবশ্য যারা প্রাইভেট শিক্ষা নিতে পারে না তাদের বেশির ভাগের আর্থিক সামর্থ্য নেই। অন্যদিকে হাতে-কলমে শিক্ষার জোর দেয়া হয়েছিল গাইড বই ও নোট এবং কোচিং সেন্টার বাণিজ্যের হাত থেকে রেহাই পেতে। কার্যত এর কোনোটি নিচের দিকে শিক্ষায় যে অর্জিত হচ্ছে না তা গবেষণায় প্রদর্শিত তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে। এদিকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হারও রয়েছে। ২০২০ সালে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত, ২০২৩ সালে এসে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রাথমিকের শিশুদের ৪১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৪৯ শতাংশ শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়েছে। দেশে তীব্র দরিদ্র্যের বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। পড়াশোনার ব্যয় মেটানো দূরে থাক, পরিবারের রুটি রুজি জোগাড়ে তাদের ব্যস্ত হতে হয়েছে।
আমাদের শিক্ষার প্রথম দু’টি ধাপ যে সঠিক পথে নেই এ গবেষণা সে কথা বলছে। একটি উন্নত মর্যাদাশীল জাতি বিনির্মাণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু সরকারে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা তাতে অর্জিত হচ্ছে না। শিক্ষাব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আরো বেশি করে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। উন্নতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা তো আরো বহু দূরের বিষয় হয়ে থাকছে।


আরো সংবাদ



premium cement