১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


ছাত্রের ওপর গুলি চালালেন শিক্ষক

মেডিক্যাল কলেজে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন

-

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পাস এককভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার পর সর্বমহলের আপত্তিতে এ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হয়, যা ব্যতিক্রমী ঘটনা। ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট কাজ করছেন ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী। কথায় কথায় মারধর খুনখারাবি করা এখন তাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার। অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কাউকে ভয় দেখানো মামুলি বিষয়। এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সন্ত্রাস চালালেন একজন শিক্ষক। জানা গেছে, তিনিও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন।
আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্রদের ওপর সন্ত্রাস করার ঘটনায় প্রথম বাংলাদেশী শিক্ষক হলেন ডা: রায়হান শরীফ। সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক তিনি। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত রোববার বিকেলে রায়হান হঠাৎ ফোন করে শিক্ষার্থীদের তার ক্লাসে হাজির হতে বলেন। শিক্ষার্থীরা অসময়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাজির হননি। পরদিন এসব শিক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার সময় আগের দিনের প্রসঙ্গ তুলে তাদের সাথে বিতণ্ডায় জড়ান রায়হান। একপর্যায়ে পকেট থেকে পিস্তল বের করে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন। গুলি ঊরুতে লেগে আহত হন ওই শিক্ষার্থী। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। রায়হানকে বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অনেকে মারধর ও অপমানের শিকার হন। সন্ত্রাসের শিকার হয়ে শিক্ষকের প্রাণ যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর পরও কোনো শিক্ষক শক্তি প্রদর্শন করেছেন; এমন দেখা যায়নি। কোনো ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ ও তা দিয়ে শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা শিক্ষকরা করেননি, এই প্রথম এমন একজন শিক্ষক পাওয়া গেল। জানা যায়, রায়হান কোনো নিয়মকানুন মানতেন না। ইচ্ছেমতো ক্লাস নিতেন। তার কথা মেনে চলতে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে পিস্তল বহন করতেন। চাকু নিয়েও ক্লাসে ঢুকে ভয় দেখিয়েছেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, সময়ে-অসময়ে ছাত্রীদের ভিডিও কল করার। ছাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেন। শুধু তাই নয়, মদ্যপ থাকার অভিযোগও উঠেছে রায়হানের বিরুদ্ধে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাধাহীনভাবে অপরাধ করেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করে রক্তারক্তি করছেন। রায়হানের মতো একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ ও ছাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহারে মেডিক্যাল কলেজের শৃঙ্খলা কমিটি কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি, এসব প্রশ্ন সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণে বলা যায়, যেহেতু রায়হান এক সময় ছাত্রলীগ করতেন; এ পরিচয়ে তিনি অশোভন আচরণ করে বেঁচে গেছেন। অথচ তার এই পরিচয় কেউ মুখ খুলে বলতে পারছেন না। গণমাধ্যমে প্রকাশ, রায়হান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ৫২তম ব্যাচের ছাত্র। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
মেডিক্যাল কলেজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব বিদ্যাপীঠ থেকে চিকিৎসক বের হন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রূঢ় আচরণের বহু অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় রায়হানের মতো ব্যক্তিরা যদি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান; তাহলে এখান থেকে ভবিষ্যতে কেমন চিকিৎসক বের হবেন, তা ভেবে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। তাই এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে রায়হানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। অভিযোগ প্রমাণ হলে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে তাকে। রাজনৈতিক কারণে যেন পার না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement