১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর রাজধানী ঢাকা

কেউ সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি

-

ঢাকাকে শহর না বলে মন্তব্য করা হচ্ছে একটি ‘মৃত্যুফাঁদ’। এখানে চার দিকে যেন মানুষের জন্য বিপদ অপেক্ষা করে আছে। অগ্নিকাণ্ড, গ্যাস বিস্ফোরণ, স্যুয়ারেজ লাইনে বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনা, নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে ইট কিংবা সøাব পড়া; এমনকি গার্ডার ধসে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। কোথাও শৃঙ্খলা নেই। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। নিমতলী চুড়িহাট্টা কিংবা বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পর একটু মাতামাতি হয়েছে মাত্র। এসব দুর্ঘটনায় কাউকে কাউকে লোকদেখানো বিচারের মুখোমুখি করা হয়। যারা শাস্তি পান আসলে তারা অনিয়মের হোতা নন। শুধু পরিস্থিতি শান্ত করতে এমন করা হয়। এ অবস্থায় সব সময় ঢাকাবাসীকে আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়, কখন ঘটে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দিপু সানা মৌচাক উড়াল সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় উপর থেকে মাথায় ইট পড়লে তিনি প্রাণ হারান। এমন আরেকটি ঘটনায় এর আগে মেট্রোরেল স্টেশনের উপর থেকে ইট পড়ে প্রাণ হারান এক জুয়েলারিকর্মী। নির্মাণাধীন উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে গার্ডার ধসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন প্রাইভেটকারে চাপা পড়ে মারা যান। এটি একটি ব্যস্ত সড়ক হলেও এখানে নির্মাণকাজে যে সতর্কতা প্রয়োজন ছিল; তা মানা হয়নি। শহরের বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প নাগরিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে চলছে। প্রতিদিন মানুষ তীব্র পীড়ায় পড়লেও সরকার ও নির্মাণ কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে খুব একটা ভাবিত নয়। এ শহরের বায়ুমান পৃথিবীর অন্যান্য নগরীর তুলনায় খুব খারাপ। শহরের বেশির ভাগ মানুষ এ জন্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগেন। পরিবেশ দূষণ স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি ও শহরের মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি।
বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনার পর ফায়ার সর্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সরবরাহকৃত তথ্যমতে, ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে। জানা গেছে, রাজধানীর অনুমোদিত ভবনগুলোর ৯০ শতাংশের নকশায় বিচ্যুতি করা হয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের কাছে যে ধরনের ভবন বানানোর অনুমতি নেয়া হয়েছিল; কার্যত তা মানা হয়নি। এ কারণে বেশির ভাগ ভবনের চার পাশে প্রয়োজনীয় খালি জায়গা নেই। রাখা হয়নি ফায়ার এক্সিট। এক কাজের অনুমতি নিয়ে বানিয়েছেন ভিন্ন কিছু। ফলে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন। রাজধানীর বহু এলাকায় এমন দেখা যায়। হোটেল-রেস্তোরাঁ, কারখানা ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের গুদাম। পুরান ঢাকায় উপর্যুপরি কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এ কারণে ঘটেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঢাকা সাধারণ একটি শহর থেকে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগাসিটিতে পরিণত হয়েছে। তবে বসবাসের সূচকে তলানিতে। ১৯৭১ সালে ঢাকায় ১৫ লাখ মানুষের বাস ছিল, আর ২০২৪ সালে এসে তা আনুমানিক ১৬ গুণ বেড়ে আড়াই কোটি হয়েছে। অথচ বিপুল মানুষের বসবাসে নাগরিক নিরাপত্তার কথা খুব কমই ভাবা হয়েছে।
কেন ঢাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাস, রাজউক, ওয়াসা, পুলিশ, বিআরটিএ ও পরিবেশ অধিদফতরসহ যত কর্তৃপক্ষ আছে; কেউ ঠিকভাবে কাজ করেনি। অন্যভাবে বলা যায়, অবৈধ কাজ করতে দিয়ে কর্তৃপক্ষের বড় একটি অংশ ঘুষবাণিজ্য করেছে। প্রকাশ্যে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড এখনো চলছে। সুতরাং ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও বাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাবেন এটি যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement