০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ধানের দরপতনে কৃষক উদ্বিগ্ন

কৃষির প্রতি নজর দিন

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনা অঞ্চলে বোরো ধান কাটা মাড়াই চলছে। ধানের দরপতনে দেড় লাখ কৃষকের মধ্যে হতাশা ও উৎকণ্ঠা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২০ মণ। হাট-বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৩০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা দরে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়।
বোরো ধান আবাদ করে উৎপাদন খরচও উঠছে না। দাদন নিয়ে ধান আবাদ করায় টাকা শোধের তাগাদায় কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য কৃষকরা। কৃষি শ্রমিক সঙ্কটে ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে কৃষকরা। এখন প্রতিদিন ৭০০ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় এবার প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন ৪ দশমিক ৫ টন ও চালের উৎপাদন ২ দশমিক ৭ টন ধরা হয়েছে। এ বছর জেলায় দুই লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টন ধান ও এক লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। খরা ও তাপদাহের পরও বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দেয়ায় শিক্ষার্থীরা ধান কাটতে মাঠে নেমে পড়েছে। হাট-বাজারে প্রচুর ধান। ক্রেতা, চাহিদা ও দাম সবই কম। নিয়ন্ত্রণ করছে ফড়িয়া ও দালালরা।
কেউ ধারদেনা করে, কেউ দাদন নিয়ে ধান বুনেছিলেন। বাজারে ধানের দরপতনে সব স্বপ্নই শেষ। এক মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে জমি ভেদে এক হাজার ১০০ টাকা। এলাকা ভেদে ব্রি-২৮ ধান এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা। এবার একজন ক্ষেতমজুরের প্রতিদিনের মজুরি অন্তত ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।
জেলার সর্বত্র সোনালি ধান। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো। ঘরে ঘরে ধান কাটা, মাড়াই চলছে। চাষিরা ধান বিক্রি করে মেয়ে বিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ধানের যে দাম, তাতে আগে জমি বিক্রি করে দাদনের টাকা শোধ করতে হবে।
পাথালিয়াহাট গ্রামে চোখে পড়ল, কয়েকজন নারী ধান ছাড়ানোর কাজ করছেন। দু’জন পুরুষ হাঁকডাক করছেন। এক কৃষক মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে বসে আছেন। খালি গায়ের উষ্কুখুষ্কুু লোকটাকে দেখেই আমাদের সিএনজি চালক বললেন, ‘স্যার, দেখেন কৃষকের হাল। ধান চাষ করে এ অবস্থা।’ কফিল নামের ওই কৃষক বললেন, ‘কপাল পুড়েছে, বাবা। দেখার কেউ নাই। ধানের দাম এত কম হবে; বুঝতে পারি নাই। দাদনে টাকা নিয়া ধান আবাদ কইরা এখন ফতুর। মেয়ের বিয়া ঠিক ওইছে। কী করমু, বুঝবার পারছি না।’
সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি হাটে একাধিক কৃষকের সাথে কথা হয়। কৃষক জয়নুল আবেদীন ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির সেচে পাঁচ হাজার টাকা, হাল চাষ-রোপণে কৃষাণ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা, সার-বীজ-নিড়ানি-কীটনাশক সাড়ে তিন হাজার টাকা, কাটা-মাড়াই ছয় হাজার টাকা এবং পরিবহন বাবদ এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে ধান পেয়েছেন ২০ মণ যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৩ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। কাশিনাথপুর হাটে ধান বিক্রি করতে আসা মাসুমদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, তিন বিঘা জমিতে মিনিকেট ধান চাষ করে বিঘাপ্রতি ১৮ মণ পেয়েছেন। বাজারে এ ধান এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দাদন নিয়ে ধান আবাদ করে বাজারে পানির দামে ধান বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, ‘নিজের জমিতে ধান আবাদ আর না করে লিজ দিয়ে দেবো।’
আমাদের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণতুল্য কৃষির দিকে পর্যাপ্ত নজর না দিলে কৃষি বাঁচবে না। এ দায়িত্ব মূলত সরকারের। এতে জনগণেরও দায় রয়েছে। প্রধান খাদ্যশস্য ধানের মতো অন্যান্য খাদ্যশস্যেও ভারসাম্য রাখতে হবে কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কায়রোতে জোরদার প্রচেষ্টা ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী আটক গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন স্টপেজের দাবিতে ফরিদপুরে প্রথম দিনই ট্রেনের গতিরোধ সন্দেশখালির ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো, বিজেপি নেতার ভিডিওতে তোলপাড় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বজ্রপাতে মা-ছেলের মৃত্যু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় পূর্ব আফ্রিকায় মানবিক সঙ্কটের অবনতির হুমকি স্বরূপ এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে কর্মবিরতিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে বাংলাদেশ-মিসরের আলোচনা দুই অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

সকল