খেয়ে না খেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ
- ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০৫
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে ভালো নেই, তা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। চার পাশের মানুষজনের সাম্প্রতিক যাপিত জীবনে সেই প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আয় না বেড়ে কমে যাওয়া এবং উল্টো দিকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে অভাবে পড়ে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে আহাজারি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু কান পাতলেই তা টের পাওয়া যায়। দেশের বেশির ভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা কেমন তা জানতে কোনো ধরনের জরিপ না করেও বলা যায়- তারা ভালো নেই। প্রকৃতপক্ষে, সরকারি হিসাবের মূল্যস্ফীতির চেয়ে, সাধারণ মানুষ এই চাপ বেশি অনুভব করছে।
এর প্রভাবে গ্রাম বা শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন না হলেও গত ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যয় ও খাদ্যাভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। দেখা যাচ্ছে, শহরের পরিবারগুলো খাবারের খরচে বেশি কাটছাঁট করছে। অন্য দিকে, গ্রামের মানুষ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বেশি কাটছাঁট করছে। গত বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) প্রকাশিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সারা দেশের এক হাজার ৬০০ পরিবারের মধ্যে ৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয়া পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশির ভাগ আছে টিসিবির কার্ডধারী। টিসিবির কার্যক্রম গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি।
জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬০০ পরিবারের গত ছয় মাসে মাসিক আয় গড়ে পাঁচ টাকা কমে ১৪ হাজার ২৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু খরচ ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৫৬৯ টাকা হয়েছে। খাদ্যে খরচ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর ফলে ৭৪ ভাগ নি¤œ আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। দেখা গেছে, ছয় মাসে নিম্ন আয়ের পরিবারের খরচ যে অনুপাতে বেড়েছে, সে অনুযায়ী আয় বাড়েনি; বরং কমেছে। এ কারণে তাদের ৯০ শতাংশের বেশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। এসব পরিবার গোশত খাওয়া কমিয়েছে ৯৬ শতাংশ, মাছ ৮৮ শতাংশ, ডিম ৭৭ শতাংশ, তেল ৮১ শতাংশ, চাল ৩৭ শতাংশ এবং আটা খাওয়া কমিয়েছে ৫৭ শতাংশ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে একবেলা না খেয়ে থাকছে ৩৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার। আবার প্রয়োজনের চেয়ে কম খাচ্ছে ৭১ শতাংশ মানুষ।
নি¤œ আয়ভুক্ত পরিবারগুলোর অনেকে ঋণ নেয়াকে উদ্ধার পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে এসব ঋণে সুদের হার অনেক বেশি। এতে করে এসব পরিবার সুদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
সবার জানা, বৈশ্বিকভাবে জ্বালানিসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থার কিছু সমস্যা আছে। এ দিকে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। সব মিলিয়ে, মূল্যস্ফীতির চাপ এখন অনেক বেশি। শুধু বৈশ্বিক কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে- এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। তাদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সমস্যা দায়ী নয়; অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাও দায়ী।
গত কয়েক মাসে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। সঙ্গত কারণে, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সাথে নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। এখনই তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে তাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠবে তখন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা