০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১৭ জিলকদ ১৪৪৪
`
ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে ঢাকা শহর

কারো কোনো মাথাব্যথা নেই

-

ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে এখন ঢাকা শহর। গত শনিবার থেকে বুধবার টানা পাঁচ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় স্থান ছিল রাজধানী শহর ঢাকার। সাধারণত দিনের শুরুতে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। সূর্য যত পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে, দূষণের মাত্রাও তত কমে আসে। কিন্তু গত বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি রাতে যেখানে দূষণ কমে আসার কথা, সেখানে উল্টো বেড়েছে।
বায়ু পরিমাপের সূচকে প্রতি ঘনমিটারে ধূলিকণাসহ অন্যান্য গ্যাসীয় দূষণ ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অনুমোদিত। উল্লিখিত পরিমাণ দূষণ থাকলে ওই বায়ু শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত স্কোর থাকলে তা ভালো বায়ুমান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ৫১-১০০ স্কোর হলে মোটামুটি, ১০১-১৫০ পর্যন্ত সতর্কতামূলক, ২০১-৩০০-এর মধ্যে থাকলে ওই মাত্রাকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। ৩০১-এর বেশি স্কোরকে বলা হয় বিপজ্জনক বায়ু। এ হিসাবে বুধবার সারা দিন চরম মাত্রার অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে ছিলেন ঢাকাবাসী।
বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালকে শুষ্ক মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ চার মাসে প্রায় সবসময় বাতাস দূষিত থাকে। এর কারণ হচ্ছে, এ সময়ে বাতাসের গড় তাপমাত্রা কমে যায়। তখন ধুলাবালি শুকিয়ে গিয়ে উড়তে থাকে। বায়ুচাপ এ সময় কমে যাওয়ায় ধুলাবালি বেশি দূরে না গিয়ে স্থলভাগের কাছাকাছি বা বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে উড়তে থাকে। কলকারখানা, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, নির্মাণকাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ময়লা-আবর্জনার বর্জ্য পোড়ানোসহ প্রায় সব উৎস থেকে বায়ু দূষিত হয়। এমনকি এ সময়ে গাছের পাতায় বা ভবনের গায়ে যে ধুলাবালি পড়ে থাকে, তাও উড়তে থাকে বাতাসের চাপ পেলে। আমাদের দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় বৃষ্টির মৌসুম না আসা পর্যন্ত এ দূষণ অব্যাহত থাকছে।
দূষিত বায়ু থেকে সাধারণত ফুসফুসজনিত রোগ হয়। এর মধ্যে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি অন্যতম। মানসিক চাপ বা উচ্চ রক্তচাপকেও অনেকে চিহ্নিত করে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় সম্প্রতি ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত কিছু রোগও বায়ুদূষণের কারণে হয়ে থাকে বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাতাসের মাধ্যমেও এ রোগের অণুজীব বা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে বস্তি এলাকায় যেমন এ রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, তেমন আবাসিক এলাকায়ও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর দেশে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বেসরকারি একটি সংস্থার হিসাব মতে, মানুষের মৃত্যু বাদ দিয়ে যদি শুধু আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়, সেটি বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা। আরেক হিসাবে দেখা যায়, বায়ুদূষণে ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশন কমবেশি পানি ছিটিয়ে থাকে। এতেও খরচ আছে। কিন্তু সরকার যদি ঢাকার ওপর কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করে, তাহলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তার চেয়েও খরচ কম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বায়ুদূষণে মূলত বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজ ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাত ও ইটভাটা অন্যতম। এ ছাড়া কলকারখানা থেকে নিঃসারিত বিভিন্ন ধরনের কার্বন, শুষ্ক মৌসুমের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জনাসহ বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া ইত্যাদি আছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন; এর মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার নির্দেশনা বাস্তবায়নেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
ঢাকার বাতাসের মান ভালো রাখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের যদিও কোনো সংস্থার একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা দরকার। কিন্তু কাজটি পরিবেশ অধিদফতরকেই করতে হবে, সেখানে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রায় আনতে নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ দ্রুত কার্যকর ও নির্মাণ কাজের সময় পরিবেশ-প্রতিবেশ বিবেচনায় রেখে স্পষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি বলে আমরা মনে করি। তবে বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধের বিষয়টি নিতান্তই বৃষ্টিনির্ভর হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ


premium cement
সাত বছর পর সৌদি আরবে দূতাবাস খুললো ইরান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে : টুকু ফেরি করে বিদ্যুৎ বিক্রিওয়ালারা কোথায় গেলো : সালাম জিএমপির নতুন কমিশনার মাহবুব আলমের যোগদান ইনজুরি ও গরমের সাথে ভিসার টেনশন লাইটহাউজ প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক ডিএনসিসির সব রাস্তা ও ফুটপাথে গাছ লাগানো হবে : মেয়র আতিক তেলাপোকা মারার স্প্রেতে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় একজন গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড পিএইচডি ডিগ্রির সাথে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কর্মক্ষেত্রের সামঞ্জস্য জরুরি বাংলাদেশ-ভারত সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

সকল