আন্তর্জাতিক নদীগুলো নিয়ে বাংলাদেশ নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের বড়ভাইসুলভ খবরদারির কারণে নদীপ্রবাহ থেকে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে ক্ষেত্রবিশেষে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর ৫৪টিই ভারতের সাথে। উভয় দেশের মধ্যে প্রবাহিত হলেও এগুলোর কোনোটি আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন অনুযায়ী বাংলাদেশ সুফল পায় না। শুকনো মওসুমে পানি প্রত্যাহার, বর্ষায় সব বাঁধ একসাথে ছেড়ে দেয়া, নানা রাসায়নিক বর্জ্য কোনো ধরনের নিয়মকানুন না মেনে নদীতে ফেলে বাংলাদেশের ক্ষতি করার খবর পুরনো। এবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী উভয় দেশের সীমানা বদলে দিচ্ছে। ফেনী ও মুহুরী নদীর পাড় ভেঙে কিভাবে ভারতের সীমানায় নতুন ভূমি সংযুক্ত হচ্ছে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের আলিনগর ও ভারতের আমলিঘাট এলাকা দিয়ে ফেনী নদী প্রবাহিত। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, শান্ত নদীটির গতিপ্রকৃতি বদলে যেতে শুরু করেছে। এটি শুধু বাংলাদেশ অংশে ভাঙছে। যদিও নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বালু উত্তোলনকে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকছে। অন্য দিকে চর পড়ে সীমানা বাড়াচ্ছে ভারতের। ইতোমধ্যে নদীভাঙনে অনেক ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। নদীটির আরো বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশ অংশে একই ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারতের সুবিধায় নদীটির ওপর সেতু নির্মিত হয়েছে। নদী থেকে উত্তোলন করে শহরে পানি সরবরাহের চুক্তি করে নিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যখন তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ একটি চুক্তির প্রত্যাশা করছিল; তখনই ভারত ফেনী নদীর পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি ফেনীর আরেকটি সীমান্তবর্তী নদী মুহুরী। ওই নদীতেও সীমান্ত এলাকায় একই ধরনের ভাঙন আগের চেয়ে তীব্রতর। এ নদীও উভয় দেশের অনেক জায়গায় সীমান্তরেখা হিসেবে কাজ করছে। ওইসব এলাকায়ও বাংলাদেশ অংশে ভেঙে ভারতে চর জাগছে। এখানে গুরুত্বের সাথে উল্লেখের প্রয়োজন, ভাঙনের ব্যাপারে সীমান্তের নদীতে ভারত সহজে কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সময়মতো নদীভাঙন রোধ করে। ভাঙনবিরোধী নদী সংস্কারের কাজ করতে ভারতকে কখনো বাধা দেয়া হয় না। দুঃখজনক হলো- একই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশ নিতে পারে না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাধা দেয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলে ভেঙে চলছে আমাদের সীমান্তের নদী। স্বাভাবিকভাবে আয়তন কমছে বাংলাদেশের।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমান অধিকার রক্ষিত হচ্ছে না, বিবিসির প্রতিবেদন থেকে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। যদিও দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বণ্টনসহ অন্যান্য সব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে একটি যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। সেখানে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আবার কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘অফিসিয়ালি ঠিক আছে কিন্তু সাইটে কাজ করতে গেলে বাধা দেয়া হয়।’ মুহুরী নদীর সীমান্ত নিয়ে বহু দিনের বিরোধ ঝুলে আছে। তার সমাধান ভারতের বাধায় করা যায়নি। এখন ফেনী নদীর সীমান্তও যুক্ত হলো। এসব নদী বৃহৎ ভারতের আকার আয়তনকে আরো বাড়াবে। আর ক্ষুদ্র বাংলাদেশের আয়তন কমাবে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি আশঙ্কার বিষয়। কারণ ভারত থেকে প্রবাহিত নদীগুলোর কোনোটি থেকে বাংলাদেশ ন্যায্য অধিকার পায় না।
আমরা আশা করব ভারতের সাথে সমমর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে সরকার। অন্ততপক্ষে ভাঙনের মুখে পড়া সীমান্ত নদীর পাড় রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে যেন বাধার মুখে পড়তে না হয়। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ভারতের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো উচিত ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা