‘আমার বাড়ি আমার খামার’ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কারণ এটা দরিদ্র জনগণের জন্য আয় বর্ধনকারী প্রকল্প। তবে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রেও অভিনব মিথ্যাচার ও প্রতারণার ঘটনা। গৃহহীনদের ঘর দেয়ার কর্মসূচিতে সচ্ছল ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ কিংবা ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির’ দৃষ্টিতে অযোগ্য হয়েও অনেকের টাকা পাওয়ার ঘটনার কথা সবার জানা। এবার এমন অনেক অঘটন ধরা পড়ল সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে। বহু ধনী মানুষও বিগত ৩০ জুন পর্যন্ত একটানা এক যুগ যাবৎ ঋণসুবিধা নিয়েছেন বা পেয়েছেন।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০০৯ সাল থেকে গত ৩০ জুন সমাপ্তি পর্যন্ত ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের উপকারভোগীর সংখ্যা কাগজপত্রে ৫৭ লাখ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই তালিকার ১৭ শতাংশ বা ১০ লাখ হলেন সচ্ছল মানুষ। খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি ডিভিশনের মূল্যায়নে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দেশের সব ক’টি প্রশাসনিক বিভাগের ২৪০টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
‘আমার বাড়ি আমার খামার’ সরকারের একটি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। আগে নাম ছিল একটি বাড়ি, একটি খামার। এর উদ্দেশ্য, গরিবদের সুসংগঠিত করে ক্ষুদ্র সঞ্চয় দ্বারা তাদের সঞ্চয়প্রবণতা সৃষ্টি। ঘূর্ণমান তহবিলের মাধ্যমে তাদের আয়বর্ধক কার্যক্রমের জন্য ঋণ জোগানোও একটি লক্ষ্য। নির্ধারিত নীতিমালা অনুসারে, এ প্রকল্পের অধীনে প্রত্যেক গ্রামে উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়, যার সদস্য ৬০ জন। তাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী হওয়ার কথা। মাঝে মাঝে এর সদস্যরা ২০০ টাকা করে জমা রাখেন আর সরকার দেয় সমপরিমাণ টাকা। তবে এর উপকারভোগীরূপে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শামিল করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি বহু ক্ষেত্রে। এমনকি, নারী সদস্য অন্তর্ভুুক্তির বেলায়ও তা করা হয়নি। কোথাও নারী ও পুরুষ সমান সমান। কোথায়ওবা সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশই পুরুষ। আইএমইডি বলেছে, সদস্য বাছাই করতে গিয়ে দু’ধরনের ‘ত্রুটি’ হয়েছে। যেমন অনুপযুক্ত লোকজন ঢোকানো হলেও এসব অযোগ্যের দরুন অনেক যোগ্য পরিবার সমিতির সদস্য হতে পারেনি। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক ‘কিছু’ ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা স্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, ‘কিছু সচ্ছল মানুষের নাম থাকতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যত বিরাট সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে, তা আরো কম হবে। প্রকল্পের প্রথম দিকেই কিছু সচ্ছল ঢুকে পড়েন। আর তাদের বের করা যায়নি।’ তিনি এ দেশের ‘প্রেক্ষাপট’ বলতে কী বুঝিয়েছেন এবং সচ্ছলদের কী কারণে বের করা হয়নি, তা বোধগম্য নয়।
জানা গেছে, নির্ধারিত নীতিমালায় বলা ছিল, পরিবারের প্রধান নারী হলে এবং তার নামে ৩০ শতক জমি থাকলে তিনি হতে পারবেন সমিতির সদস্য। তবে পুরুষ পরিবারপ্রধান সমিতির সদস্য হতে হলে থাকা চাই ৫০ শতক জমি। চর এলাকা ও পাহাড়ের গরিব পরিবারের বেলায় সর্বাধিক এক একর জমির মালিক হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল; কিন্তু সর্বত্র নীতি লঙ্ঘন করে ধনীরা তালিকায় জায়গা করে নেন। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের শুরুতে বরাদ্দ ছিল ১১৯৭ কোটি টাকা। এর পাঁচ বছর মেয়াদ থাকলেও ৪ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে সাত হাজার ৮৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
আমরা চাই, কোনো প্রতারক কিংবা মিথ্যাবাদী যেন ‘গরিবের ভাত মেরে’ খেতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হোক। এটা প্রশাসনেরই দায়িত্ব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা