৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এনআইডি নিবন্ধন স্বরাষ্ট্রে

ভোটার তালিকায় হস্তক্ষেপের শঙ্কা

-

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত বছর জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রস্তাব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতর পরের মাসেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলে। এর জন্য সাত সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। অর্থাৎ সরকার আঁটঘাট বেঁধেই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরিপত্র জারি করলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনীতিকরা এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে তার স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন থেকে বঞ্চিত করে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম কেন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার প্রয়োজন দেখা দিলো সেই প্রশ্ন উঠেছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সরকারপ্রধান বা তার দফতর এরকম নির্দেশনা দিতে পারেন কি না এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে।
বলা হচ্ছে, এটি করা হলে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে। এটা নিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। সেই সাথে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ব্যবহারে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এই উদ্যোগ ইসির স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হামলা বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। কারণ ভোটার আইডি কার্ড প্রণয়ন ও তার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এটা সংবিধানেই বলা আছে। ‘রুলস অব বিজনেস এবং অ্যালোকেশন অব বিজনেস’-এও বলা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত কাজের এখতিয়ার ইসির। ইসি গত এক যুগে শত শত নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তার সব দায়িত্ব সুষ্ঠু, স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পেরেছে এমন উদাহরণ সামান্যই। সেই প্রসঙ্গও উঠছে চলমান বিতর্কে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নানা রকম জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। টাকার বিনিময়ে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ, জাল পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যাংকঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়াসহ অন্যান্য ভুলভ্রান্তি আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জাল জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ঘটনা ইসির দায়িত্ব পালনে ঘাটতির বড় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই সবকিছু মিলিয়েই বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে অর্পণ করা হলে নির্বাচন কমিশনের একটি বৃহৎ অংশ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে আসবে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা খর্ব হবে। তিনি বলেন, কমিশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে চাইলে একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠন করে স¤পূর্ণ আলাদা অবকাঠামো তৈরি করে এটা করা উচিত।
নাগরিক সংগঠন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার ডাটাবেজ যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে যায় সরকার নানা কারসাজির মাধ্যমে কাউকে ভোটার করতে পারে এবং কাউকে বাদ দিতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের একটা সুযোগ থেকে যায়। দুর্নীতিরও সুযোগ তৈরি হয়।
এসব আলোচনা থেকে সংশয় জাগতে পারে, এই উদ্যোগের পেছনে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী! দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের ধারাবাহিক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। এখন ভোটার তালিকার কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে সরকার তাতে সম্পূর্ণ নিজস্ব ঘরানার ভোটারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় কি না এমন প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। আমাদের ধারণা, এ ধরনের যেকোনো কার্যক্রম শুধু দেশের জন্য নয় ক্ষমতাসীনদের জন্যও ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement