১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


স্বাস্থ্যে জনবল নিয়োগে ঘুষবাণিজ্য

দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে

-

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে সহযোগী একটি দৈনিক। পত্রিকার বিবরণ মতে, এক কোটি টাকা ঘুষ সেধেছেন সরকারের এক কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের ঘটে যাওয়া দুর্নীতির তুলনায় এটি কিছুই নয়। দেশের স্বাস্থ্য খাতের নিষ্ঠা দায়িত্বপরায়ণতা যখন খুব দরকার; তখন একে একে এ বিভাগের অনিয়মের খবর ফাঁস হচ্ছে। করোনায় রোগীদের সেবাদানের চেয়ে তা নিয়ে বড় ব্যবসা হয়েছে। করোনার কিট ও সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়েও হয়েছে ঠকবাজি। এরপর যুক্ত হয় করোনার ভুয়া পরীক্ষা। করোনা আছে কি নেই এর ভুয়া সনদ তৈরি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির খবর বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের সুনাম ক্ষুণœœ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল করোনার নামে তৈরি হাসপাতাল হাওয়া হয়ে গেছে।
সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবরটি স্বাস্থ্য খাতে ১৮০০ জনবল নিয়োগে ঘুষ আদান-প্রদান সংক্রান্ত। নিয়োগ এখনো হয়নি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি অংশ লিখিত পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬০Ñ৭৯ নম্বর পর্যন্ত পেয়েছেন। পরীক্ষাসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানা যায়, এমন উত্তরপত্র তারা পেয়েছেন সেখানে কলম ছোঁয়ানোর সুযোগ নেই। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি অংশের উচ্চ নম্বর পাওয়ার আলামত স্পষ্ট। মৌখিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে পরীক্ষকরা অসঙ্গতি ভালোভাবে আঁচ করতে পারেন। তারা দেখতে পান, বেশি নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না। তারা এ ধরনের প্রার্থীদের কাছে তিনটি প্রশ্ন রাখেন যেগুলো তারা লিখে উত্তর দেবেন। উচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা সেই উত্তর লিখতে পারেননি। পত্রিকাটি পরে মৌখিক পরীক্ষায় যারা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি এমন ছয়জনের সাথে কথা বলে তারা জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষার আগে তারা ইন্টারনেটে একটি লিঙ্কে উত্তর পান। সে অনুযায়ী মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ কমিটি থেকে দু’জনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের জায়গায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক পদে নতুন নিয়োগ পান ডা: আবুল হাশেম। তিনি এক চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে ঘুষ সাধার অভিযোগ জানালে জনবল নিয়োগ পরীক্ষার ঘুষ চক্রটির খোঁজ মেলে। ওই চিঠিতে তিনি দাবি করেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শ্রীনিবাস দেবনাথ ১ মার্চ দেখা করে তাকে ঘুষের প্রস্তাব দেন। তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের ভাইভা বোর্ডে পাস করিয়ে দেয়ার বিনিময়ে এক কোটি টাকা দেয়া হবে। তিনি যখন ঘুষ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন; তখন তাকে পরে আরো অর্থ দেয়া, এমনকি পদোন্নতির লোভ দেখান দেবনাথ। নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান তারও আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে অনিয়মের ব্যাপারে চিঠি দেন। সেখানে তিনি একেকজন পরীক্ষার্থীর বিপরীতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগকে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের প্রস্তাব করেন নিয়োগ কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপঙ্কর বিশ্বাস। দু’জন সৎ কর্মকর্তার চিঠির সূত্রে অপরাধী চক্রের ব্যাপারে জানা যায়। দেশে প্রশাসনের অভ্যন্তরে দুর্নীতিবাজ চক্রের দাপট প্রবল। অন্য দিকে সৎ দৃঢ়চেতা কর্মকর্তাদেরও দেখা মিলছে। যারা দুর্নীতিকে খোলাসা করে জনসম্মুখে আসতে দিয়েছেন তাদের সাহসের তারিফ করতে হয়। বাহবা দিতে হয়। আর যারা দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশাসনকে দুর্বল অক্ষম করে দিয়ে আখের গোছাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, বেশ কিছু দিন ধরে প্রশাসনে এমন আবহ বিরাজ করছেÑ দুর্নীতিপরায়ণরা পদোন্নতি এবং বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য দিকে সৎ দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা পদোন্নতির বদলে কোণঠাসা হচ্ছেন। এই প্রবণতা দেশের স্বার্থে বন্ধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল