০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পোশাক কারখানা নিয়ে হযবরল সিদ্ধান্ত

শ্রমিকের স্বার্থ সবার আগে

-

পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কয়েক দশক ধরে দেশে এ শিল্পের উত্থান ঘটেছে। দুর্ভাগ্য, এ শিল্প সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। বিশেষ করে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়গুলোতে আশাপ্রদ কোনো উন্নতি হয়নি। ধরতে গেলে এ শিল্প বাংলাদেশে টিকে রয়েছে শ্রমিকদের একেবারে শস্তা মজুরির ওপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে পোশাক উৎপাদনের আদেশ কেন ধনী দেশগুলো দিচ্ছে, এক কথায় তার উত্তর হচ্ছে তুলনামূলক কম খরচে তারা পোশাক কিনে নিতে পারে সে জন্য। এভাবে একটি শিল্প কখনোই টেকসই হতে পারে না। করোনা মহামারীর মধ্যে এর নেতিবাচক দিক আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। শ্রমিকের জীবন অন্যদের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি মানুষের ভিড় থেকে। আমাদের পোশাক কারখানায় শত শত শ্রমিক একসাথে কাজ করে। সে ক্ষেত্রে কারখানায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এর মধ্যে কারখানাগুলো খুলে দেয়ার আদেশ জারি করা হলে শ্রমিকদের বিশাল হয়রানি আমরা দেখতে পেলাম।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পোশাক শিল্প কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার অনুরোধ ছিল। তবে জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কারখানা খোলা রাখা হয়। সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে সেগুলো চলছে। বিভিন্ন সংস্থা এসব কারখানা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে এর ঝুঁকি নিরূপণ করছে। এগুলোর সংখ্যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী হাজারের বেশি। ২ এপ্রিল পোশাক শিল্প সংগঠন বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে কারখানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে মালিকদের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তার আগের দিন বাণিজ্যমন্ত্রী পোশাক কারখানা চলতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করেন। একই দিন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যেসব কারখানায় ক্রয়াদেশ আছে এবং করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন চলছে সেসব কারখানা বন্ধের ব্যাপারে সরকার নির্দেশনা দেয়নি। এরপর পোশাক শিল্প মালিকরা বৈঠক করে গতকাল রোববার থেকে পোশাক কারখানা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পোশাক শিল্প মালিকদের সব সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত আবার বাতিল করা হয়। কিন্তু এ স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটে গেছে অনেক কিছু।
আমরা দেখলাম, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঢাকামুখী স্রোত। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে শ্রমিকরা ঢাকায় আসার চেষ্টা করেছে। রাস্তায় যানবাহন না থাকার পরও অনেকে হেঁটে শত মাইল পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নিয়েছে। আবার রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও ট্রাকে যে যেভাবে পেরেছে গাদাগাদি করে রাস্তা পাড়ি দিয়েছে তারা। এর মধ্যে অনেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। রাস্তায় দলে দলে শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, বেতন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ঢাকায় আসতে বাধ্য করা হয়। শ্রমিকরা ইতোমধ্যে তাদের দুরবস্থার কথা বলেছে। অনেকে বর্তমান বন্দী অবস্থায় দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছে। অর্থাভাবে অচিরেই তারা খাদ্যপণ্য কিনতে আর পারবে না। এ অবস্থায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছে।
আমরা দেখেছি, সরকার প্রথমেই পোশাক শিল্পের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও শ্রমিকরা যাতে বেতন পায় সে জন্য এ প্যাকেজ। নিয়ম অনুযায়ী এ টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেয়ার কথা। এখন টাকা পৌঁছানো কঠিন কিছু নয়। যেভাবে শ্রমিকদের ঢাকায় টেনে আনা হলো সেটা অমানবিক। প্রণোদনার অর্থ শ্রমিকদের বেতনভাতা হিসেবে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়াই মানবিকতা। এ নিয়ে কোনো ধরনের প্রলোভন দেখানো অনৈতিক। কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার। অনির্দিষ্ট ও হযবরল সিদ্ধান্ত বর্তমান দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেবে। আগে শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে, পরে অর্থনীতি সচল রাখার চিন্তা করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, সবাই মিলে এ ব্যাপারে বিজ্ঞোচিত সিদ্ধান্ত নেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
নওগাঁয় ইট ভাঙার মেশিনের চাপায় নিহত ১ গণতন্ত্র-সুশাসনের জন্য সর্বশেষ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান রিজভীর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ভারতের রেজিস্ট্রিবিহীন হজ পালন কমাতে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা সৌদি আরবের নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখে মানায় না : মির্জা আব্বাস তেল আবিবে ইরাকি গ্রুপের হামলা ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম উম্মাহ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী নোয়াখালীতে সিএনজি-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৩ কোভিড ভ্যাকসিনে মস্তিষ্কে ক্ষতি, মামলা জয়ে এগিয়ে ভুক্তভোগী যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করলে হামাসকে বহিষ্কার : যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি বুমেরাং হতে পারে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে রাজধানীতে শিবিরের বিক্ষোভ

সকল