১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন

জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ

-

ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল দেশটির রাজধানী দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পাঞ্জাব ও কেরালাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য। কেরালা, পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের রাজ্যে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়ন করবে না। কারণ, এই আইন ধর্মের ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবে এবং একই সাথে এটি দেশের সংবিধানের মৌল ধর্মনিরপেক্ষ নীতিরও পরিপন্থী। এ নিয়ে এরই মধ্যে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সেনা, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রতিরোধ উপেক্ষা করে গত শুক্রবার ব্যাপক আকারে মিছিল, সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার আসামে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। তাদের রুখতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে কয়েকজন নিহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ দমাতে বিভিন্ন রাজ্যে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং এসএমএস সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে বিলটিতে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ফলে এটি এখন আইনে পরিণত। তবে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন তৃণমূলের একজন এমপি।
এ দিকে, বিতর্কিত এই আইন নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। এটিকে মুসলমানদের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স। গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মৌলিক চরিত্রের দিক থেকেই বৈষম্যমূলক এবং এ ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা জানিÑ এ আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং আমাদের আশা, মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে আইনটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
অপর দিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কারণে ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার। মোদি সরকারের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ভারতের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এই কড়া বার্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির কূটনৈতিক মহল। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে কী কী ঘটছে, সে দিকে নজর রেখেছি আমরা। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সবার সমানাধিকারই আমাদের দুই দেশের গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি। ভারতের কাছে আমাদের আহ্বান, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে তারা যেন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে।’
আমরাও মনে করি, নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি ভারতের সংবিধানের মৌল নীতিÑ ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যহীন। সেই সাথে এই আইন ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশটির জাতিকে বিভাজিত করবে। আমাদের আহ্বানÑ ভারত সরকার গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও মানবিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। ভারতের নিজের স্বার্থেই এ কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, ভারতের জনগণ অবস্থান নিয়েছে এ আইনের বিপক্ষে।


আরো সংবাদ



premium cement