০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছোট্ট দেহ ক্ষতবিক্ষত

নজিরবিহীন পৈশাচিকতা

-

শিশুটির বয়স মাত্র পাঁচ বছর। গলায় রশি বাঁধা। কদমগাছের ডালে ঝুলছিল তার ক্ষতবিক্ষত লাশ। পেটে লম্বা দু’টি ছুরি ঢুকানো। নিষ্ঠুরতার এখানেই শেষ নয়; গলা কেটে হত্যার পর তার দু’টি কান ও পুরুষাঙ্গও কেটে নিয়েছে নরপশু খুনিরা। নজিরবিহীন এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে। হতভাগ্য শিশুটির নাম তুহিন। গত সোমবার সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। নিহতের বাবা একজন কৃষক। এমন বর্বরতা যেকোনো দেশেই কল্পনাতীত। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর সবার একটিই জিজ্ঞাসা, নৈতিক অধঃপাতের কোন অতল গহ্বরের ঘূর্ণাবর্তে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা? এই সহিংসতার পর আমাদের সমাজে মানবিকতার আর কী বাকি থাকল? গণমাধ্যমে খবরটি পড়ে বিবেকবান মানুষের বাকরুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। মানবতাসম্পন্ন যেকোনো ব্যক্তির মন হয়ে পড়বে ভারাক্রান্ত। আর যারা এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের মানসিক অবস্থা কেমন, তা বর্ণনাতীত।
পুলিশের ভাষ্যমতে, এই নিষ্ঠুরতার সাথে শিশুটির পরিবারের লোকেরাই জড়িত। গ্রামের অন্যদের সাথে জমিজমা নিয়ে এ পরিবারের বিরোধ ও মামলা রয়েছে। এর জের ধরে তাদের ফাঁসাতে ঠাণ্ডা মাথায় এ নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কারা, কখন, কিভাবে এটা ঘটিয়েছে, সব জেনেছে বলেও পুলিশের দাবি। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু এখনো বলেনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জমিজমা নিয়ে বিরোধে বিবাদিকে ফাঁসাতে আপনজন হত্যার নজির রয়েছে অতীতেও।
বাংলাদেশে ক্ষমতা আর সম্পদ নিয়ে হানাহানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব অশান্তির কারণও এই দু’টির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার হাঙ্গামা। এর সহজ শিকার সমাজের দুর্বল অসহায় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। প্রতিটি হত্যাই লোমহর্ষক ও বেদনাদায়ক। বেশ কিছু খুনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়। তা হলো, ঘাতক শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না; নিহত ব্যক্তির লাশের প্রতিও পাশবিক আচরণ করা হচ্ছে। এই বিকৃতি কী বার্তা দিচ্ছে আমাদের? মানবিকতা ও বিবেকবোধ কি সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যাচ্ছে? সাম্প্রতিক সময়ে দেশে খুনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এটিই মনে হয়। এসব ঘটনা আদিম বর্বরতাকে ও হার মানাচ্ছে। খুনিরা দু’পেয়ে জন্তুতে পরিণত হচ্ছে। এর সর্বশেষ শিকার শিশু তুহিন। তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দূর অতীতেও ঘটেছে কি না, আমাদের জানা নেই। ছোট্ট শিশুটির কী অপরাধ ছিল? যারা এই খুনের সাথে জড়িত তারা পশুর চেয়েও অধম। এর আগে সিলেটে রাজন নামে একটি শিশুকে খুঁটির সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পানি চাইলে তাকে হত্যাকারীরা তা-ও দেয়নি।
নিষ্ঠুর সব ঘটনা রোধ করতে না পারলে আমাদের সমাজ মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এর রাশ টানতে হলে দেশে স্থায়ীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যেকোনো হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আর শিশুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োজন। সব অমানবিক ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তুহিন হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিয়ে খুনিদের দ্রুত বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি দেশের সবার।


আরো সংবাদ



premium cement