১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব নয়

-

বর্তমান সভ্যতার একটি প্রধান ভিত্তিভূমি জ্বালানি। এটি ছাড়া কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে প্রতিটি দেশ জ্বালানির প্রয়োজনীয় মজুদের জন্য উদ্যোগ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি পেতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর বিশ্বব্যাপী তৎপরতা ব্যাপক। এর প্রভাবে অনেক দেশে আরোপিত যুদ্ধও প্রত্যক্ষ করেছে পৃথিবীর মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহসহ অস্থিরতার অন্যতম কারণ পরাশক্তিগুলোর জ্বালানিচাহিদা। আমাদের দেশেও জ্বালানি, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। গ্যাসসঙ্কটে শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিকসহ সব খাতেই জ্বালানির জন্য চলছে হাহাকার। সঙ্কট মেটাতে এখন উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। অথচ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সীমানাবিরোধ নিষ্পত্তির পর গভীর সমুদ্রে এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। পেট্রোবাংলা সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকগুলো পুনর্নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় এখন ২৬টি তেল-গ্যাস ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি অগভীর ও ১৫টি গভীর সাগরে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে; তা জানতে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করতে হয়। এ জরিপের ওপর নির্ভর করে তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চার বছর ধরে কাজটি শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। দুইবার দরপত্র আহ্বান করেও নির্বাচিত কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হয়নি। অনেক দেরিতে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে চালানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দু’টি সার্ভে কোম্পানির সাথে পেট্রোবাংলার চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। অপর দিকে, অর্ধশতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে। এ জন্য তেলের আমদানি গত ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। বছর দশেক আগেও ৮৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো দেশীয় গ্যাস দিয়ে। এখন তা ৫০ শতাংশের কম। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও মজুদ তেমন বাড়েনি। ব্যবহারের ফলে মজুদ গ্যাস প্রতিনিয়তই কমছে। এ ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন সময় কিছু কর্মসূচি নেয়া হলেও তা বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হলে দেশে এখন যে গ্যাসসঙ্কট রয়েছে, তা থাকত না; উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানিরও প্রয়োজন পড়ত না।
গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। পাঁচ গুণ বেশি দরে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে বাড়ছে ভর্তুকি; বাড়ছে গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের দাম। এতে বিষম চাপে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকেরা। এলএনজি আমদানি না করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। এ সুযোগও রয়েছে আমাদের। দেশে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। প্রতি বছর এক টিসিএফ ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই হিসাবে ১২ বছরের মধ্যেই গ্যাসের বর্তমান মজুদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা না হলে উচ্চমূল্যের জ্বালানির্ভর হয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এতে বিদ্যুতের উৎপাদনব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে বাড়বে প্রায় সব ধরনের পণ্যের উৎপাদনমূল্য। শিল্পে অচলাবস্থা দেখা দেবে। অথচ প্রতিবেশীদের সাথে দেশের সমুদ্রসীমানা নিষ্পত্তির পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও সাগরে গ্যাস বা তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করা তো দূরের কথা, অনুসন্ধান জোরালো করার দৃশ্যমান উদ্যোগ পর্যন্ত নেই পেট্রোবাংলার। পক্ষান্তরে বিরোধ নিষ্পত্তির পরপরই মিয়ানমার ও ভারত বঙ্গোপসাগরে নিজ নিজ অংশে অনুসন্ধান চালিয়ে বিরাট সাফল্য পেয়েছে। দুশ্চিন্তার কারণ হলো, সাগরে ব্লকগুলোর ভৌগোলিক কাঠামো একই হওয়ায় বাংলাদেশ অংশের গ্যাস মিয়ানমারের উত্তোলন করার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদেশী কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়, সে জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা প্রয়োজন। পেট্রোবাংলাকে সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে জাতীয় স্বার্থে। তাহলে সহজ হবে দেশের আগামী দিনের জ্বালানিসঙ্কট মোকাবেলা করা।


আরো সংবাদ



premium cement
‘লাজুক’ স্বভাবের ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ যেভাবে শক্তিশালী গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালত কিছু অভিবাসীকে দ্রুত বহিষ্কার করতে চায় হামলা জোরদার করতে পারে রাশিয়া : জেলেনস্কি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে লরি, শিশুসহ নিহত ২ ভৈরবে র‍্যাব হেফাজতে নারী আসামির মৃত্যু চবিতে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযান, ৩০ মোটরসাইকেল জব্দ দুর্ভিক্ষের কারণে সুদানে মানবিক সঙ্কট নিয়ন্ত্রণের বাইরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো বিদেশী সামরিক উপস্থিতি মানব না : হামাস ৩ লাশ উদ্ধারের নেতানিয়াহুর দাবিতে সন্তুষ্ট নয় ইসরাইলিরা কিডনির ‘নীরব ঘাতক’ উচ্চ রক্তচাপ! বিবাহবিচ্ছেদের পথে জেনিফার-বেন!

সকল