আদালত হচ্ছে সর্বাধিক নিরাপদ জায়গাগুলোর একটি। সেই আদালতে একেবারে বিচারকের খাস কামরায় হত্যা মামলার এক আসামি অন্যজনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন করেছে। তাও সবার সামনে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার কুমিল্লায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে। এ ঘটনার পর দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছেÑ কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কিভাবে খুনি ধারালো অস্ত্র নিয়ে আদালতে ঢুকতে পারল? হত্যার মতো একটি সাঙ্ঘাতিক অপরাধ প্রায় বাধাহীনভাবে কিভাবে ঘটাতে পারল এই ঘাতক? ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারক গণমাধ্যমে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার সাথে দেশবাসীরও জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশবাহিনীর সদস্যরা কী দায়িত্ব পালন করছেন? জানা যায়, একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে বাইরে থেকে কুমিল্লার ওই আদালতে আসা পুলিশের এক এএসআই খুনিকে জাপটে ধরে আটক করেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, তখন আদালতে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। একই দিনের আরো একটি ঘটনায় দায়িত্বহীনতার উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তা হলোÑ একটি উন্মুক্ত রেলক্রসিংয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস বিধ্বস্ত হয়ে বর-কনেসহ ১১ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (সঙ্কেত ও টেলিকম) বলেছেন, যেখানে দুর্ঘটনা হয়েছে, সেটি অনুমোদিত ক্রসিং নয়। স্থানীয় লোকজন নিজেদের সুবিধার জন্য সেটি ব্যবহার করত। প্রশ্ন হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ অনুমোদনহীন রেলক্রসিংয়ের বিষয় জানার পর কেন এত দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি? এই দায়িত্বহীনতার কারণে এত প্রাণ যে ঝরে গেল, তার দায় কে নেবে? তাই এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না, দেশে যার যে দায়িত্ব তা যথাযথভাবে পালন না করায় প্রতিনিয়ত নিরীহ-নির্দোষ মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে খুন, গুম, ধর্ষণপ্রবণতাসহ অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সবার জানা রয়েছেÑ অতি সম্প্রতি বরগুনায় বহু মানুষের সামনে রিফাত শরীফ নামে এক তরুণকে নয়নসহ তার কয়েক সঙ্গী কুপিয়ে হত্যা করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় কেউ প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা, টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করেনি। এ ধরনের গণনিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আলোচনার ঝড় উঠেছে। সবার প্রশ্নÑ কেন আমাদের এহেন পলায়নপ্রবণতা? এর একটি উত্তরই বেরিয়ে এসেছে; আর তা হলো, দেশে আইনের শাসন যথাযথভাবে কার্যকর না থাকা। রাষ্ট্রে যখন ‘দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে’ ব্যত্যয় ঘটে, তখনই অপরাধীরা নৃশংস ঘটনা ঘটাতে কোনো ভয় পায় না। কারণ, দুর্বৃত্তদের বদ্ধমূল ধারণা জন্মে, অপরাধ যত নিষ্ঠুর-নৃশংসই হোক না কেন, তা করলেও তারা শাস্তির মুখোমুখি হবে না এবং মদদদাতারা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে অপরাধীদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে। এ অবস্থায় সমাজে দুর্বল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গণনিষ্ক্রিয়তা দেখা দেয়। এতে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষাপটেই কুমিল্লার আদালতে বিচারকের খাস কামরায় এমন ঘটনার অবতারণা হলো, যা নজিরবিহীন।
আমরা মনে করি, কুমিল্লায় এত নিরাপত্তার মধ্যেও আসামির ছুরি নিয়ে আদালতে প্রবেশ করাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে হালকাভাবে নেয়ার কোনো অবকাশ নেই। দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। তাই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে সে অনুযায়ী সারা দেশে বিশেষত আদালতপাড়ার নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তা না হলে এমন ঘটনা আবার যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা