বাংলাদেশে ভূমিসংক্রান্ত অফিসগুলোতে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং জনগণের হয়রানি আজো সীমাহীন। ঘুষ ছাড়া এসব অফিসে কোনো ধরনের সেবা পাওয়া যায় না। দালাল চক্রের অবাধ দৌরাত্ম্যে সেবাপ্রার্থীরা জিম্মি ও অসহায়। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের ভূমি অফিসগুলো নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের আস্তানায় পর্যবসিত হয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের লিড নিউজে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরে জানানো হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের কাছে অসংখ্য অভিযোগ জমা হয়েছে ভূমিসংশ্লিষ্ট দুর্নীতি নিয়ে। দুদক প্রতি সপ্তাহে ভূমি অফিসগুলোতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও সেখানে দুর্নীতি ও জালিয়াতি অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ দিন অনুসন্ধান করে দুদক প্রধান আটটি খাতে ভূমিসংক্রান্ত দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব দুর্নীতি রোধে ১০টি সুপারিশ দুদক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছে। এসব তথ্যসংবলিত বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
দুদকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমির নিবন্ধন, নামজারি, অধিগ্রহণ, কর, রেকর্ড এবং খাসজমি, অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ঘুষ না দিলে প্রাপ্য সেবা পাচ্ছে না। দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা সত্ত্বেও এদের কারো বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেখা গেছে, এমন অসৎ লোকজন বদলি হলে নতুন কর্মস্থলে আবার ঘুষ ও অনিয়মে লিপ্ত হয়। দুর্নীতিবাজদের অনেকে একই স্থানে একনাগাড়ে কয়েক বছর থেকে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে। দুদক জানায়, সর্বাধিক জালিয়াতি করা হচ্ছে নামজারি, নিবন্ধন, অধিগ্রহণ, খাসজমি এবং পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তির বেলায়। ঘুষ ছাড়া কোনো নামজারি হয় না। দালাল, নিম্নস্তরের কর্মচারী এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের একটা অংশ দুর্নীতিতে জড়িত। ঘুষ না দিলে হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার। জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের জমি ব্যক্তির নামে এবং একজনের জমি আরেকজনের নামে, নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করা হয়। বছরের পর বছর ভূমিকর আদায় না করেই জালিয়াতির মাধ্যমে কর ফাঁকিদাতাদের সহায়তা করা হচ্ছে। কোনো কোনো সময়ে প্রতারণা করে দেখানো হয়, কর মওকুফ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে একই লোককে খাসজমি বারবার বন্দোবস্ত দেয়া হচ্ছে। তাদের অনেকে সরকারি জমিতে বহুতল ভবনও নির্মাণ করছে। অনেক পরিত্যক্ত ভূমি দীর্ঘকাল বেদখলে থাকলেও সেগুলো উদ্ধার করা হয় না। এ দিকে, অর্পিত সম্পত্তির নথি গায়েব করার নজিরও আছে।
ভূমি নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি প্রতারণার অবসান ঘটাতে দুদক বিভিন্ন সুপারিশ করলেও সংশ্লিষ্ট মহল কোনো ব্যবস্থাই নেয় না। দুদকের ১০ দফা সুপারিশে আছেÑ প্রত্যেক বছর জেলা উপজেলায় মাসব্যাপী ‘ভূমিসেবা মেলা’র আয়োজন করে সাথে সাথে নিবন্ধন, নামজারি, কর গ্রহণ ইত্যাদির উদ্যোগ নেয়া, ভূমিকর ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করা, নিবন্ধন আইন সংশোধনপূর্বক মালিকানা ও ধরন নিশ্চিত হয়ে ভূমি নিবন্ধনের বিধান প্রণয়ন, ভূমিসংক্রান্ত দফতরগুলো ‘একই ছাতার নিচে আনা’ এবং এ ক্ষেত্রে অন্তত পারস্পরিক তথ্যবিনিময়ের আইনগত কাঠামো তৈরি করা, খাস-পরিত্যক্ত-অর্পিত সম্পত্তি, জল-বালু-পাথরমহাল, হাটবাজার ইত্যাদির ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করা, জরিপ হালনাগাদ করা, ভূমি সম্পর্কিত প্রত্যেক আবেদনের বিপরীতে যথাযথ পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেয়া, ভূমিব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট, ভূমিসংশ্লিষ্ট সব ফরম বিনা মূল্যে সর্বজনীন করা, সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা প্রয়োগে ভারসাম্য আনয়ন প্রভৃতি।
আমরা আশা করি, বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার সুপারিশগুলো অবিলম্বে কার্যকর করার মাধ্যমে ভূমি নিয়ে যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসানে তৎপর হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা