০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নদী দখলের বিরুদ্ধে রায়

নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন কাম্য

-

বাংলাদেশের সব নদ-নদী এখন থেকে জনগণের সম্পদ। এই সম্পদ দখল বা আত্মসাতের যেকোনো চেষ্টা রুখতে হবে। আর এই দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। সরকারের পক্ষে নদীরক্ষা কমিশন এই দায়িত্ব পালন করবে। হাইকোর্ট গত রোববার এক রায়ে নদী দখলের বিরুদ্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। বলা হয়েছে, নদী দখলকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং কোনো ধরনের ব্যাংকঋণ পাবেন না। আদালত বলেছেন, নদ-নদী দখলদারের তালিকায় নাম থাকলে তারা দেশের সব ইউনিয়ন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হবেন। আদালত নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নদী দখলকারীরা যাতে ব্যাংকঋণ না পায়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তুরাগ নদ রক্ষার্থে একটি রিট মামলার নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয়া হয়েছে।
আদালত তার রায়ে তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রায়ে বলা হয়েছে, দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল-জলাশয় রক্ষার জন্য ‘আইনগত অভিভাবক’ হবে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন। ফলে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল জলাশয়ের সুরক্ষা, সংরক্ষণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, শ্রীবৃদ্ধিসহ সব দায়িত্ব বর্তাবে এই কমিশনের ওপর।
রায়ে হাইকোর্ট যেসব নির্দেশ দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে : প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তা পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। যদি কোনো নাম নদ-নদী দখলদারের তালিকায় থাকে, তা হলে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সে অযোগ্য বিবেচিত হবে। নদ-নদী দখল অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে এর সাজা, জরিমানা নির্ধারণ করা, অভিযোগ দায়ের পদ্ধতি ইত্যাদি নদী কমিশন আইনে অন্তর্ভুক্ত করে ছয় মাসের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে হবে। নদ-নদীর পাশে কোনো প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে নদীরক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি নিতে হবে। ডিজিটাল ডাটা বেজ প্রণয়নের ক্ষেত্রে, স্পারসো স্যাটেলাইটের সাহায্যে আরএস/জিআইএসসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সব নদ-নদীর ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয় করে সব ইউনিয়ন, পৌরসভা, জেলা-উপজেলায় সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা এবং যাতে যেকোনো নাগরিক নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নদ-নদীর ম্যাপ/তথ্য সংগ্রহ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। নদীরক্ষা কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি দুই মাসে এক ঘণ্টার জন্য নদ-নদীর প্রয়োজনীয়তা, নদ-নদীর দূষণ সম্পর্কে পাঠদান করা এবং দেশের ছোট-বড় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অংশগ্রহণে দুই মাস পর পর এক ঘণ্টার নদীসংশ্লিষ্ট বৈঠক করতে হবে।
নদী যে মানুষ এবং অন্য সব প্রাণীর মতোই একটি জীবন্ত সত্তা, এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাম্প্রতিককালে স্বীকৃতি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে ভারতের একটি রাজ্যের হাইকোর্ট সে দেশের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নদী গঙ্গা ও যমুনাকে ‘জীবন্ত মানবিক সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এই দু’টি নদী সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা দেন। তারও আগে সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ডে একটি নদীকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়।
দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এই রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের বৃহত্তর রাষ্ট্র ও সমাজে যে শৈথিল্য প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান, তাতে নতুন এই নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এর আগেও হাইকোর্ট ঢাকার চার পাশের নদীগুলোর সীমানা চিহ্নিকরণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা খুব যে কার্যকরভাবে প্রতিপালন করা হয়েছে এমন নয়। আইনের ফাঁক গলে নদী দখলদারেরা যেন পেছলে যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা দরকার সবার আগে। সবার প্রত্যাশা, এবার হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তা যথাযথ সর্বত্র অনুসরণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
পশ্চিম তীরে ৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যা, নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ৭০ হাজার লোক ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সুন্দরবনে আগুন : নেভানোর চেষ্টা চলছে, তবে সময় লাগবে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা আ’লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গাম্বিয়ায় ওআইসির সম্মেলন শুরু ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশী আহত মধুখালীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচালক নিহত, আহত হেলপার বরিশালে নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ নয়া দিগন্তের শৈলকুপা সংবাদাতার ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা

সকল