২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়

আবারো বিনষ্ট হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

-

খুলনায় নীরব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকারদলীয় সিটি মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে বিজয়ী করে নেয়ার আলোচনা-সমালোচনার পর এখন দেশবাসী দেখতে চাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন কেমন হয়। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা গত বুধবার গাজীপুরে প্রার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচন খুলনার মতো হবে না। গাজীপুরে সুষ্ঠু ভোট না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’
সিইসির এ বক্তব্যে এটুকু প্রমাণ হয়েছে, তিনি প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন খুলনার মেয়র নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না। সে নির্বাচন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তার বর্তমান বক্তব্য মতে, গাজীপুরের নির্বাচন খুলনার মতো হবে না। গাজীপুরের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ায় এবার নির্বাচন কমিশন কঠোরতা অবলম্বন করবে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এবার কি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার কথা রাখবেন? কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। কারণ নির্বাচন কমিশন থেকে এ ধরনের কঠোরতা অবলম্বনের কথা বহুবার শুনেছি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি স্থানীয় ও উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। যেমনটি ছিল না সর্বশেষ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেখানে নীরব ও শান্তিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ-দখলের মাধ্যমে সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করিয়ে নেয়ার জোরালো অভিযোগ থাকলেও সিইসি বলেছেন, এই নির্বাচন ‘পিসফুল ও এক্সেলেন্ট’ হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে সিইসি সন্তুষ্ট। এখন আবার তিনি বলছেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচন খুলনার মতো হবে না।’
সিইসির এই বক্তব্য যে অন্তসারশূন্য হবে তার আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তা করার বিষয়টি একেবারেই আমলে নিচ্ছে না। সেই খুলনাসহ অন্যান্য নির্বাচনে যেভাবে বিএনপিদলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার চালিয়েছে, সেই একই কায়দায় গাজীপুরেও তাদের ব্যাপক গ্রেফতার করে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে গাজীপুরেও খুলনার মতো একই কায়দায় বিরোধীদের মাঠশূন্য রেখে সরকারদলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, গাজীপুরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের আটজন ইলেকশন কো-অডিনেটরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। তাদের অভিযোগ এ ধরনের গ্রেফতারে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের পূর্ববর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এসব গ্রেফতারের ঘটনার পরপর হাসান উদ্দিন সরকার তাদের আশুমুক্তি দাবি করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন সমন্বয় কমিটির কনভেনার ফজলুল হক মিলন অভিযোগ করেন, তাদের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তিনি তাদের আশু মুক্তি কামনা করেন। রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, তিনি পুলিশ প্রশাসনকে লিখে জানিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে।
আমরা আশা করব ইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। জানি না ইসি তা করবে কি না। তাই গাজীপুরের নির্বাচন নিয়েও আমাদের সংশয় থেকেই গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement