২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবারো সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। - ছবি : সংগৃহীত

এবারো মন্ত্রণালয়ের দিক দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে এবার সর্বোচ্চ সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগাপ্রকল্পকে অগ্রগাধিকার দিয়ে আকার ১৫.৫৭ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ১৬.৮৮ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে দ্বিতীয় এবং শিক্ষা খাতকে তৃতীয় সর্বোচ্চে ১১.৩৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের কারণে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক স্থানীয় সরকার বিভাগকে সর্বোচ্চ ১৫.৪০ শতাংশ বা ৪০ হাজার ৫০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী এডিপিতে মোট ১ হাজার ৩০৯টি প্রকল্প বরাদ্দসহ অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।

১ হাজার ৭৮টি প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৪.৩৩ শতাংশ। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাব ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের নিমিত্ত গত ৯ মার্চ জারিকৃত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সকল বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ-এর কাছ থেকে এডিপির জন্য মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৫৫৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রস্তাব পায়। যাতে স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৯২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৮৯ হাজার ৫৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, অর্থ বিভাগ থেকে গত ৬ এপ্রিল পত্র মারফত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি'র আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার আকার দেয়া হয়। যেকানে স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (৬৪.২৬ শতাংশ) এবং প্রকল্প সাহায্য ৯৪ হাজার কোটি টাকা (৩৫.৭৪ শতাংশ) নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপির আকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল এডিপি অপেক্ষা ১৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা (৬.৮৮ শতাংশ) বেশি এবং সংশোধিত এডিপি অপেক্ষা ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা (১৫.৫৭ শতাংশ) বেশি।

স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নসহ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপি'র আকার হবে সর্বমোট ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। যেখানে স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৫ কোটি ৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৯৪ হাজার ৭৭৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

১৫টি খাতে বরাদ্দ
সাধারণ সরকারি সেবায় বরাদ্দ কমে ২ হাজার ১১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষায় কমে ১ হাজার ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, জন শৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় কমে ৩ হাজার ৪৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় কমে ৫ হাজার ৩৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা, কৃষিতে কমে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে বাড়িয়ে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বাড়িয়ে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি ৩২ লাখ টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদে কমিয়ে ৮ হাজার ৯৯৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে বাড়িয়ে ২৭ হাজার ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে কমিয়ে ১৬ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে কমিয়ে ২ হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা, শিক্ষা খাতে কমিয়ে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, সামাজিক সুরক্ষায় বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার বিভাগকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৫০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ১৫.৪০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩৪ হাজার ৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ১২.৯৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগকে ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা বা ১২.৮৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয়কে ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বা ৫.৬৯ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ৫.৩৬ শতাংশ বা ১৪ হাজার ৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বা ৪.৯৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা বা ৪.৪৬ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১২ হাজার ১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ৪.৫৭ শতাংশ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে ৩.৬০ শতাংশ বা ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সেতু বিভাগকে ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বা ৩.৪৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করছে পরিকল্পনা কমিশন।

থোক বরাদ্দ
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ হতে প্রাপ্ত ১ হাজার ৫৩২টি নতুন অননুমোদিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে ১ হাজার ৭৮টি প্রকল্প ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়। ২০২৩- ২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে বিভিন্ন সেক্টরের আওতায় মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক ‘থোক বরাদ্দ’ বাবদ ১১ হাজার ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যেখানে স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার ৩২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৪.৩৩ শতাংশ।

স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বরাদ্দ
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে ৫টি সেক্টরের আওতায় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৮৯টি এবং জিওবি ও প্রকল্প সাহায্যের পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের অংশীদারিত্বে এমন ১৭৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ সকল প্রকল্পের অনুকূলে মোট ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প সংখ্যা মোট ১ হাজার ৩০৯টি। যার মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১১৮টি, সমীক্ষা প্রকল্প ২২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮০টি এবং নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ৮৯টি। এর মধ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আরএডিপি হতে এডিপিতে স্থানান্তরিত প্রকল্প ১ হাজার ২৭২টি। যেখানে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৯৫টি, সমীক্ষা প্রকল্প ২০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৭১টি এবং নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ৮৬টি। আর প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দবিহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য এডিপিতে মোট ১ হাজার ৭৮টি। এছাড়া সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্পঃ এডিপি নির্দেশিকা অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ৭৯টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দ
বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে মোট ৮ হাজার ৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তায় ৮০০ কোটি টাকা, উপজেলা উন্নয়ন সহায়তায় ৭০০ কোটি টাকা, জেলা পরিষদ উন্নয়ন সহায়তায় ৫০০ কোটি টাকা, পৌরসভা উন্নয়ন সহায়তায় ৪০০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সহায়তায় ৪০০ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তায় ৩০০ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার উন্নয়ন সহায়তায় ৯৫ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়নে ৯৫ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) ১০০ কোটি টাকা, কার্যক্রম বিভাগের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্প
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে ৩০ জুন ২০২৪ এর মধ্যে সমাপ্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ৩১৪টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৫৭টি, সমীক্ষা প্রকল্প ৩০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৮টি এবং নিজস্ব অর্থায়নে ৯টি।

অন্যদিকে, চলতি ২০২৩ সালের জুন এ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না মর্মে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত ডিপিপি বা টিএপিপি অনুযায়ী ৩০ জুন ২০২৩ এ মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এমন ৫৩৬টি প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ বলছে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪ বা ৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপি’র বরাদ্দ ব্যবহার হ্রাস পায় এবং সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ৩০ জুন এর মধ্যে বৃদ্ধি বা সংশোধনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। যাতে অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ আগামী জুলাই ২০২৩ থেকেই প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা সম্ভব হয়। এ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ৩০ জুন ২০২৩ এর মধ্যে বৃদ্ধি/সংশোধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বৃদ্ধি/সংশোধন না করা পর্যন্ত এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement