মহাসড়কে তৈরি পোশাকের কার্ভার্ডভ্যানে চুরি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে রফতানি আদেশ কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা। তারা বলেছেন, চুরি বন্ধ না হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএয়ের নেতারা বলেন, গত দুই দশকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই হাজারেরও বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার পোশাক চুরি হয়েছে। গত বছরও ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন কাভার্ডভ্যানে চুরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্রাজিলের এক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রফতানিকারককে জানিয়েছে, তারা বেশিরভাগ কার্টনের ৩০-৩৫ শতাংশ পোশাক বুঝে পায়নি। ওই চালানে ২৬ হাজারের বেশি পোশাকের মধ্যে আট হাজারই তারা পায়নি।
অভিযোগ করার পর র্যাব ওই চুরির সাথে জড়িত চারজনকে আটক করেছে।
বিজিএমই নেতারা বলেন, ‘যারা এই চুরির সাথে জড়িত, তাদের মাঝেমধ্যে গ্রেফতার করা হলেও কয়েক মাস পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একই কাজ করে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। ওই রকমই একজন হলে সাহেদ। তার বিরুদ্ধে ১৭-১৮টি মামলা থাকার পরও তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে তার চক্র নিয়ে আবার চুরিতে নেমেছে।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চুরির সাথে জড়িত কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করলে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের কয়েকজন রফতানি পোশাক চুরি করে ঢাকায় একাধিক বাড়ি করেছে, গাড়ি কিনেছে।
বিজিএমইএ নেতারা তাই মহাসড়কে তাদের পোশাকের নিরাপত্তা চেয়েছেন। তারা মার্চ মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ পাঁচ দফা দাবি জনিয়েছেন।
বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত পোশাক রফতানিকারক ও চারটি পোশাক কারখানার মালিক মো: আসাদুজ্জামান বুধবার বলেন, ‘এই চুরির কারণে আমাদের অনেক জরিমানা দিতে হয়। আমি নিজে এর শিকার। আমাদের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বায়ারদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘‘চোরচক্র কাভার্ডভ্যানের পিছনের দরজার তালা খুলে কার্টন থেকে পোশাক বের করে সেখানে ‘ঝুট’ ভরে দেয়। এটা ধরা পড়ে যখন বায়ারের কাছে যায় তখন। এর দায় কেউ নিতে চায় না। শেষ পর্যন্ত আমাদেরই নিতে হয়। এর সাথে কাভার্ডভ্যানের চালকরাও জড়িত।’’
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়ানি।
বিজিএমইএয়ের সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ওইসব দেশের মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। তাই পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা এক সাথে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট ছোট ভাগ করে অর্ডার দিচ্ছে। আবার অনেক অর্ডারের দাম পরিশোধের সময়সীমাও পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পোশাক রফতানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালাতে পারছে না। ওভারটাইমও করানো যাচ্ছে না।’
বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুধবার বলেন, ‘শুধু ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারাবিশ্বেই একটা সঙ্কট চলছে। তার প্রভাব আমাদের তৈরি পোশাকখাতে পড়ছে, অর্ডার কমছে। ছোট পোশাক কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে। কোনো কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যা রফতানি করি তার পেমেন্ট তিন-চার মাস পরে পাই। এখন তারা পেমেন্ট আরো পিছিয়ে দিচ্ছে তাদের সঙ্কটের কারণে। এটা আমাদের জন্য আরো একটি সমস্যা।’
তার কথায়, ‘এরপরও রফতানি আয় বাড়ার কারণ হলো পোশাক তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি পিসের মূল্য বেড়েছে। ফলে মনে হচ্ছে রফতানি আয় বেড়েছে। কিন্তু লাভের পরিমাণ বাড়েনি। রফতানি বাড়েনি।’
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে প্রকৃত রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে। কারণ, কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে খরচ বেড়েছে। সেখানে রফতানি আয় বাড়তি দেখালেও প্রকৃত রফতানি আয় কত বেড়েছে, তা এখন প্রশ্ন।’
তবে তিনি আরো বলেন, ‘সঙ্কট আছে। কিন্তু তাতে অর্ডার কমছে বলে আমার জানা নেই। অর্ডার হারানোর ঘটনা অভ্যন্তরীণ। এক প্রতিষ্ঠান অর্ডার হারিয়েছে, ওই অর্ডার আরেক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। তাতে অর্ডার হারানো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরে অর্ডার চলে যাওয়ার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা