১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড ঘাটতি বাজেট আসছে

- সংগৃহীত

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে এই ঘাটতি জিডিপির অংশ হিসেবে ৬ শতাংশ ছুঁয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে এই ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এত বিশাল ঘাটতি বাজেট আর কখনো হয়নি। এই ঘাটতি পূরণের জন্য শুধু ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতিসহ বাজেটের সামগ্রিক আকার গিয়ে ঠেকেছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঘরে। আগামী বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত এই বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।

‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে বাজেটটি চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে ঘাটতি সাধারণত ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। করোনার প্রভাবে প্রথমবারের মতো তা ৬ শতাংশ স্পর্শ করছে।

একনজরে পরিসংখ্যান : আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় (অনুদানসহ) ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আর অনুদান ব্যতীত ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর অনুদান ব্যতীত রাজস্ব আয় তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে ১৯০ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। যা কখনো অর্জন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এর আগে একবার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

আগামী বাজেটে করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার তিন কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে চার হাজার ১৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে পরিচালন ব্যয়ের পরিমাণ তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭২২ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে দুই হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আয় এবং ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে আগামী বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, জিডিপির ৫ শতাংশ। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ৪৪ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বাড়ছে।

ঘাটতি বাজেট পূরণ করা হয় অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশী উৎস থেকে। আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে আগামী বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়াসহ প্রণোদনার সুদ ব্যয়ের কারণে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়।

নতুন বাজেটে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার চার কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা রয়েছে।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে। বাজেটে জিডিপির উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ; যা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সংশোধিত বাজেট : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর ১১ মাসের প্রাথমিক হিসাবে এই ঘাটতি ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এসব কারণ বিবেচনায় এনে রাজস্ব আয়ে ২৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্য ২৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে এনবিআরের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা।

সংশোধিত বাজেটে আট হাজার ১২৮ কোটি টাকা ঘাটতি বাড়ানো হয়েছে। এতে অনুদান ব্যতীত সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। কিন্তু করোনার কারণে এই প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর জিডিপির আকার ৮৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর যা ছিল ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement