এবার কুরবানির ঈদে লাভের আশায় দশ লাখ টাকার পশুর চামড়া কিনে পথে বসেছেন গাজীপুরের রতন রবিদাস। অনেক স্বপ্ন ছিল, লাভের টাকায় এবার তিনি তার বসত ভিটার মেরামতের কাজ করবেন। কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে না পারায় এখন তাকে সেই ভাঙ্গা বসতভিটা বিক্রি করেই ব্যাংকের লোন পরিশোধের চিন্তা করতে হচ্ছে।
চামড়ার বাজার এমন মন্দার কবলে পড়বে তা কোনো দিন চিন্তাও করতে পারেননি রতন রবিদাস। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি গাজীপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে চামড়া কিনে ঢাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু এ বছর এমনই বদনসিব যে, এখন তাকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকার বসতভিটা বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার চিন্তা করতে হচ্ছে। অথচ ক’দিন আগেও চামড়া বিক্রির লাভের টাকায় ভাঙ্গা বসতভিটার মেরামতের কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন সেই বসতভিটাই বেঁচতে হবে তাকে।
বুধবার বিকেলে ছয় হাজার টাকায় এক মাসের জন্য ভাড়ায় নেয়া চামড়ার আড়তে গিয়ে কথা হয় গাজীপুরের কাশিমপুরের বারেন্ডা এলাকার রতন রবিদাসের সাথে। নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, প্রতি বছরই আমরা এই ব্যবসা করি। এ ব্যবসায় আমরা একেবারে নতুনও না। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরেই এই ব্যবসার সাথে জড়িত আমি। গত ঈদেও চামড়রা বাজার মন্দা ছিল, তবে এ বছরের মতো চামড়া একেবারে ফেলে দেয়ার মতো ছিল না। লাভ কম হলেও গত বছর লোকসান হয়নি। সেই আশায় এবছর গাজীপুরের কোনাবাড়ির ব্র্যাক অফিস থেকে চড়া সুদে ২৯ লাখ টাকা ঋণও নিয়েছেন তিনি।
ঈদের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ও বিভিন্ন মাদরাসা থেকে গরুর চামড়া কিনেছেন তিনিসহ তার আরো তিন অংশীদার। সব মিলিয়ে তারা এবার দশ লাখ টাকার চামড়া কিনেছেন। রিক্সা ভ্যান ভাড়া করে আড়তে এনে জমা করেছেন সেই চামড়া। এরপর ৮/১০ শ্রকিম নিয়োগ করে সেই চামড়াতে লবন মাখিয়েছেন। লবনও কিনতে হয়েছে চড়া দামেই। সব মিলিয়ে অনেক টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এই চামড়াতে।
এদিকে প্রতি বছরের মতো ঈদের পরদিনই তিনি যোগাযোগ করেন ঢাকার ট্যানারী মালিকদের সাথে। কিন্তু প্রায় সব ট্যানারি মালিকরাই এ বছর কোনো চামড়া কিনছেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন রতনকে। ফলে বিপাকে পড়ে খোঁজ নেন সাভারের হেমায়েতপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে। কিন্তু তারাও প্রায় একই সুরে কথা বলেন। সবশেষে যোগাযোগ করেন সব সময় যিনি রতনের কাছ থেকে চামড়া কিনেন হাজারীবাগের পুরনো খরিদদার আইয়ুব ব্রাদাসসের সাথে। রতন আইয়ুন ব্রাদার্সসের কাছে এখনো বকেয়া চার লাখ ৬১ হাজার পাঁচশ টাকা পাবেন বলেও জানান। কিন্তু এ বছর ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয় তারাও এবার কোনো চামড়া কিনছেন না।
সামিয়ানার নিচে স্তুপ করে রাখা রতন রবিদাসের কেনা চামড়ায় ইতোমধ্যে পঁচন ধরেছে। মাত্র তিন চার দিনের জন্য লবন মিশিয়ে চামড়া যেখানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে জমিন নিচু হওয়ায় সেখানেও বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করেছে। দুর্গন্ধযুক্ত এই পঁচা চামড়া সরাতে এলাকাবাসী রতনকে দু’দিন সময় বেঁধে দিয়েছে।
রতন রবিদাস আরো জানান, দাম কম হওয়াতে এই চামড়া ট্রাকে করে আমরা ঢাকায় কিংবা সাভারের হেমায়েতপুরেও নিতে সাহস করছি না। কেননা পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে যে খবর পাচ্ছি তাতে এই চামড়া ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হবে না। দাম না থাকায় ফেলে আসতে হবে। এক ট্রাক চামড়া ঢাকায় নিতেই ভাড়া গুনতে হবে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এরপর লেবার খরচ আছে, বিক্রি না হলে খাজনাও দিতে হবে। তিনি বলেন, চামড়া যদি অবিক্রিত থেকে পঁচেও যায় যাক, তবু আর কোনো লোকসানের ঝুঁকি নেব না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা