নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৪টি দেশ থেকে যেভাবে শ্রমিক যাচ্ছে সেভাবেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া উচিত বলে মনে করছে জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অন্যরা যেভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে সেই পথে না গিয়ে শুধু বাংলাদেশ থেকেই কেন মালয়েশিয়ার দেয়া স্পেশাল এপ্রুভালে ওয়ার্কার যাবে। একই ভুল বারবার করা যাবে না। যদি সোর্সকান্ট্রি দেশগুলোর মতো শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেয়া না হয়, তাহলে প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় উচ্চ অভিবাসনে কর্মী পাঠানোরই দরকার নেই। বরং যে টাকা খরচ করে শ্রমিক যাবে সেই টাকা দিয়ে তারা নিজ দেশেই ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভালোভাবে থাকবে পারবে। গতকাল জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তারা এভাবেই তাদের মনের কথাগুলো নয়া দিগন্তকে বলেন।
মালয়েশিয়া থেকে একাধিক জনশক্তি ব্যবসায়ী ও একজন অভিবাসন বিশ্লেষক নাম না প্রকাশ করে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি রাজনৈতিক অবস্থাও টালমাটাল। নির্বাচন দেয়া হলে কে জিতবে সেটা এখনই বলা মুশকিল। এই পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার খুলবে কিনা সেটিও বলা যাচ্ছে না। তবে সব কিছু ঠিকভাবে চললেও এই শ্রমবাজার খুলতে আরো তিন-পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে। আবার আরো বেশিও হতে পারে। তবে কম হবে না বলে মনে করেন তারা। তবে যতটুকু শোনা যাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে এবারো পুরনো গ্রুপটি সিন্ডিকেট করতে বেশ তৎপর হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, মালয়েশিয়া সরকার ১৪টি সোর্স কান্ট্রিভক্ত দেশ থেকে শ্রমিক আনছে। তারা যেভাবে শ্রমিক পাঠাচ্ছে সেভাবে পাঠালে মালয়েশিয়ার আসলে সমস্যা কোথায়? শুধু বাংলাদেশ থেকেই কেন স্পেশাল অ্যাপ্রুভাল দিয়ে মালয়েশিয়ায় লোক আসতে হবে?
আমরা মনে করি সব দেশের নিয়মেই বাংলাদেশ থেকে এবার লোক আসুক। নতুবা শ্রমবাজার খুললেও আমাদের দেশের কিন্তুকোনো লাভ হবে না। এতে শুধু লাভবান হবে যারা সিন্ডিকেট করবে এবং তাদের যারা নিয়ন্ত্রণ করবে! অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, নেপাল থেকে মালয়েশিয়ায় লোক এলে এমপ্লয়ার বিমান টিকিট দেয়, লেভি দেয়, ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধা দেয়। এতে নেপাল থেকে একজন কর্মীর মালয়েশিয়ায় আসতে সর্বোচ্চ খরচ হয় এক লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। আর আমাদের ওয়ার্কার আসতে লাগে চার লাখ টাকা কখনো আরো বেশি। এবার যাতে আমাদের দুই দেশের গঠন করা সিন্ডকেটের ফাঁদে পড়তে না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শুনেছি, মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫টি রিক্রুটিং লাইসেন্সের একটি তালিকা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের বলে দেয়া হয়েছে, ‘২৫ লাইসেন্সের তালিকা দেয়া সম্ভব নয়’। কারণ বাংলাদেশের যত লাইসেন্স রয়েছে সবই সরকারিভাবে এনলিস্টেট।
ব্যবসায়ীদের মধ্য আরো গুঞ্জন রয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে ২৫০টি লাইসেন্সের একটি তালিকা দিতে চাইলেও মালয়েশিয়া সরকার নাকি তাতে রাজি হচ্ছে না। এই অবস্থার মধ্যই ‘সিন্ডিকেটের স্বপ্নদ্রষ্টা’ আমিন নুর গংরা বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ায় থাকা ব্যবসায়ীদের ২৫ জনের সিন্ডিকেটে রাখার আগাম আশ্বাস দিয়ে অগ্রীম বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন সিন্ডিকেটের সাথে যারা সম্পৃক্ত হতে পারে, তাদের গতিবিধি মনিটরিং করা হলে টাকা লেনদেনের বিষয়টিও বেরিয়ে আসতে পারে বলেও জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃত্তরা মনে করছেন।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে ব্যবসা খোলার চাইতে শ্রমবাজার বন্ধ থাকাই অনেক ভালো। তবে গতকাল পর্যন্ত ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেটের চূড়ান্ত নামের তালিকায় কারা কারা থাকতে পারেন আর কারা বাদ পড়তে পারে সেটি গোপনই থাকছে। খোলাসা হয়নি। তবে আগের সিন্ডিকেটের কোন কোন সদস্য সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে একেক দিন একেক এলাকায় খানার পিনার বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেখান থেকেই আবার চালানো হচ্ছে আসন্ন বায়রা নির্বাচনী প্রচারণাও।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারী পুরনো ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে এক গ্রুপ সিন্ডিকেট করতে চাইলেও অন্য গ্রুপ সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এখন সময়ই বলে দিলে শ্রমবাজারে নতুন যদি সিন্ডিকেট গঠন হয়ই তাহলে সেখানে কোন কোন এজেন্সির নাম আসে?
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের ৫ মাসে মাত্র ১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছে। যদিও ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক যাওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।