২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৯ প্রবাসী নেতার বিবৃতি

রোহিঙ্গাদের মাদক সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষার আহ্বান

রোহিঙ্গাদের মাদক সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষার আহ্বান - ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ৯ জন বিশিষ্ট রোহিঙ্গা নেতা দুর্ভাগ্যের শিকার রোহিঙ্গাদেরকে মাদক সিন্ডিকেটের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে । মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এসব রোহিঙ্গা নেতা বলেন, বর্মী সামরিক বাহিনীর সহায়তায় একটি মাদক সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা শিবির ও আশেপাশের স্থানীয় অঞ্চলগুলো মারাত্মক মাদক দিয়ে প্লাবিত করছে। এর অসহনীয় স্পিলওভার প্রভাবের আগেই এ সমস্যাটিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার জন্য তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ড. আম্বিয়া পারভীন, আনোয়ার শাহ আরকানী, ড. হ্লা কিউ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মুজিব উল্লাহ, খায়রুল আমিন, নায় সান লুইন, তুন খিন ও জাও মিন হাটুত।

বিবৃতিদাতারা গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক জুম সম্মেলনের বরাত দিয়ে বলেন, বিগত ১৪ আগস্টের পর থেকে রিফিউজি ক্যাম্পে যে রোহিঙ্গাবিরোধী অপরাধমূলক কার্যকলাপ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। আমাদের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, অবৈধ ইয়াবা মাদক ব্যবসায় জড়িত কয়েকটি গ্রুপের লড়াইয়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষসহ নিরীহ অনেক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আমাদের সংগ্রহ করা প্রমাণ অনুসারে, মাদক ব্যবসায় আধিপত্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল দলগুলোর মধ্যে লড়াইয়ের কারণ। আমরা এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে একথা বলেছি যে সিন্ডিকেট সদস্যরা রোহিঙ্গাদের শান্তিকামী সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে না; ধর্ম বা মাতৃভূমিতে আমাদের সার্বজনীন অধিকার পুনরুদ্ধারের যে চূড়ান্ত লক্ষ রয়েছে তার প্রকাশ তাদের কর্মকান্ডে নেই।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য রোহিঙ্গা নেতাকর্মীর সাথে আমরাও শিবিরগুলিতে সন্ত্রাসবাদী কাজের হোতা ক্ষুদ্র ড্রাগ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলার ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব অনুভব করছি। গত ৫ অক্টোবর প্রবাসী রোহিঙ্গা সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে কিছু কর্মী প্রথম জুম সম্মেলন করেছিলেন যেখানে তারা এই অপরাধ বন্ধ করতে এবং বর্মী বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেতনা ধ্বংস না করতে আহ্বান জানান। কিন্তু এরপরও এই সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসায়ে বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা না থামিয়ে তাদের অপরাধকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তারা গত ২ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত নির্দোষ মানুষের উপর অকল্পনীয় দুর্ভোগ চাপিয়েছে যার ফলস্বরূপ মহিলা ও শিশুসহ প্রায় ২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তাদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে জবাই, গোপনে হত্যা, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা।

বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন, আমরা জানতে পেরেছিলাম যে তাদের হত্যা সন্ত্রাসের তৎপরতা আরো দুটি শিবিরে ছড়িয়ে দেবার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল। এই অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কঠিন বার্তা দিতে আমরা ২০ অক্টোবর আরো একটি জুম সম্মেলনের আয়োজন করতে বাধ্য হই। ওই জুম সম্মেলনে আমরা সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং তাদের অপরাধ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি। এরপর তাদের অপরাধ কম মাত্রায় হলেও অব্যাহত রয়েছে।

বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের বিশিষ্ট প্রবাসী রোহিঙ্গাদের পর্যবেক্ষণ হলো, অদৃশ্য হাতের ইশরায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তুলতে মাদককে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পেছনে গোপন হাত রয়েছে বর্মী সরকার ও বর্মী সেনা বাহিনীর। তারা আয়োজক দেশকে বিব্রত করতে, রোহিঙ্গাদেরকে হিংস্র ও অকৃতজ্ঞ মানুষ হিসাবে চিত্রিত করতে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি দুর্বল করার জন্য মাদক সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া শিগগিরই আদালতে সহায়ক উপকরণ ও প্রমাণাদি জমা দেবে।

বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন, বার্মার আরাকান রাজ্য এখন একটি উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। এটি কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বা দর্শনার্থীদের জন্যও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সীমান্ত থেকে তুলে নিয়ে ওপারে হত্যা করা হয়েছে। তবে সিন্ডিকেট সহযোগীরা বিনা বাধায় মাদক চালানের অপরাধ করছে। বার্মিজ সামরিক বাহিনী এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যদিও তারা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ও রাখাইন উভয় সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশেষভাবে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব থেকে আসা ড্রাগ সিন্ডিকেট ও তাদের সহযোগীরা গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেককে মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে এবং অবমাননাকর বার্তা প্রেরণ করে সাইবার অপরাধ ছড়াচ্ছে। এমনকি তারা প্রবীণ শরণার্থী, মহিলা এবং শিশুদের রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে বাধ্য করেছে। হত্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেক মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিতে বাধ্য হবার তথ্য রয়েছে।

প্রবাসী রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অধিকাংশ অপরাধ বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় এই ড্রাগ সিন্ডিকেট দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধীদেরও তাদের পৃষ্ঠপোষক বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সাথে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত এবং শিবিরগুলিতে রোহিঙ্গা জনগণের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিরোধের মুখোমুখি করা উচিৎ। অন্যান্য দেশে তাদের সহযোগিদেরও একই পরিণতি হওয়া উচিত। যারা সিন্ডিকেটের সদস্যদের প্রতি বিবেকবোধের প্রতি সাড়া দিয়ে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কল্যাণের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান বিবৃতিদাতারা।

একই সাথে বিবৃতিদাতারা প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠির সার্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা সত্যিকার অর্থে লড়াই করে যাচ্ছেন এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বার্মিজ সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষাকারী অপরাধী মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন তাদের প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

সকল