১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী : মহৎ চিত্তের এক মনীষী

-

সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ১৮৯৬ সালে সাতীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে খুলনায় পরে কলকাতায় এফএ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন সাংবাদিকতা। মোহাম্মদী, সওগাত, খাদেম, দৈনিক সেবক, দি মুসলমানসহ বেশ ক’টি পত্রিকায় দীর্ঘকাল চাকরি করেন। ১৯৩৫ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে কলকাতা ছেড়ে নিজ গ্রাম বাঁশদহে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সাহিত্যসাধনায় পুরোমাত্রায় আত্মনিয়োগ করেন। মরু ভাস্কর, মহামানুষ মুহসীন, সৈয়দ আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, নবাব আবদুুল লতিফ, ছোটদের হজরত মোহম্মদ সা: ও শিশুতোষ কাহিনীÑ ছোটদের শাহানামা লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি একজন প্রধান প্রাবন্ধিক ও পথিকৃত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হন। একজন শক্তিশালী গদ্য লেখক ও সমাজ সংস্কৃতির প্রথম সারির চিন্তানায়ক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সম হন। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবন, সমাজজীবন ও ব্যক্তিজীবনের নানাবিধ সমস্যাকে তিনি যুক্তিনিষ্ঠার সাথে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির পর্যালোচনায়ও তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অুণœ রাখেন।
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী শুধু সাহিত্যের জন্য সাহিত্য কিংবা কেবল নামযশের কাঙাল হয়ে লেখালেখি কিংবা কলমজীবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হননি। জাতির স্বার্থ, জাতির মঙ্গলাকাক্সায় উজ্জীবিত হয়ে কলমযুদ্ধে নাম লিখেন যৌবনারম্ভেই এবং আমৃত্যু সেই ল্েয মন-প্রাণ উজাড় করে, বিত্ত-বৈভবের সামান্যতম মোহেও নয়Ñ কেবলই স্বজাতির, আদর্শের নিরিখে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা করেছেন আজীবন। এই যে আদর্শ চেতনা এবং স্বাজাত্যবোধ-স্বার্থের পেছনে কিংবা টু-পাইস অর্জনের ল্যচ্যুত সাধনার কণ্টকাকীর্ণ পথ পরিক্রমাÑ এটা কোনো সাধারণ ব্যাপার বা বিষয় নয় আদৌ। এ আদর্শ, নিষ্ঠা, স্বজাতির প্রতি কর্তব্যনিবিষ্টতা তাকে কঠিনতম বন্ধুর সড়কেই ধাবিত করেছে সারাটি জীবন।
ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী কত মহৎ মহান চারিত্র্যের অধিকারী হলে এ মহান ব্রত প্রতিপালন করেন প্রভুত কষ্ট ও সীমাহীন অভাব-অনটনের মধ্য দিয়েই। আর্থিক দিক দিয়ে যথেষ্ট টানাপড়েন সত্ত্বেও ান্ত দেননি মহান কর্তব্যকর্মে।
কত বড় হৃদয়ের অধিকারী হলে, কত বিশাল চিত্তের বিত্ত থাকলেÑ এহেন মহৎ ভূমিকায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন আজীবন তা কল্পনা করলেও আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অথচ আজ চারিদিকে দেখছি এবং সর্বত্রই পরিলতি হচ্ছে একটাই চিত্রÑ স্বার্থান্ধ মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। বেশির ভাগ মানুষই ঘোরেন শুধু অর্থবিত্তের পেছনে। উদার চিত্তের যেন আকাল পড়েছেÑ পলিমাটির সুজলা সুফলা আমাদের এ দেশে। পরার্থে নিবেদিত এমন মানুষের প্রচণ্ড অভাব পরিলতি হচ্ছে সর্বত্র। তবে পুরোপুরি হতাশ হওয়ার জো নেই মোটেই। আমরা আশাহত হচ্ছি না সামান্যতমও। কারণ মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীদের রেখে যাওয়া স্বর্ণালি সম্পদ, পরশমণির সন্ধান এ জাতির নতুন প্রজন্ম যদি প্রাপ্ত হয় তবে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীরা যে সাহিত্যসম্ভার রেখে গেছেন জাতির জন্য, তা জাতির নতুন প্রজন্মকে আলোকের সন্ধান দেবে এতে নেই কোনো সন্দেহ। মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী গ্রামে ফিরে এসে আপন বাড়িতে বসেই শত হাজার বাধা-বিপত্তি ও আপত্তির মধ্যেই স্বর্ণগর্ভা সম্পদ রেখে গেছেন স্বজাতির জন্য এবং স্বদেশের কল্যাণে তার জীবন ও সময়কে উৎসর্গ করেছিলেন চোখমুখ বুজে। কলিজার ঘাম ঝরিয়ে রক্ত পানি করে করে সাধ্যসাধনার ধন ‘আমানত’ রেখে গেছেনÑ তা আজ এবং আগামী দিনেও পথ দেখাবে জাতিকে। মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীদের রেখে যাওয়া আলোকবর্তিকা ঘোরতর অন্ধকারেও-বিপদ বিসম্বাদে আমাদেরকে সত্য সুন্দরের মহাসড়কে পৌঁছে দেবে, শাশ্বত সত্যের নাগাল পাইয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ মহান মনীষী এমন একজন অতুলনীয় চিন্তাবিদ যার চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বাস। স্বদেশ, স্বজাতির উন্নতি ও প্রাগ্রসরতা ছিল ল্য। আদর্শ ও সুস্থ সংস্কৃতির আলোকে জীবনকে সাজানোর, সমাজকে আলোকিত করার এক অন্তরঙ্গ প্রয়াস আমরা তার লিখিত প্রবন্ধাবলিতে ল করি। এ মনীষী চিন্তানায়ক ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে রোগাক্রান্ত হয়েও ক্রমাগত লেখালেখি করেছেন। স্বার্থের চেয়ে স্বজাতি, স্বদেশের-সর্বোপরিÑ স্বধর্মের প্রতি গভীরতম মমত্ববোধ এবং কর্তব্যনিষ্ঠা তাকে পার্থিব লাভালাভের প্রতি ন্যূনতম আকর্ষণ সৃষ্টি করতে সম হয়নি। বরং অজাগতিক চিন্তা-চেতনাই তাকে এমন বন্ধুর পথ অবলম্বন করতে উৎসাহিত করেছে আজীবন। চাকরিহীন জীবনে অর্থবিত্তের অতীব প্রয়োজনকেও গ্রাহ্য না করে একমাত্র কলমি যুদ্ধের নিরবচ্ছিন্ন কেশকর জীবন অবলম্বন করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বিশেষভাবে একটি অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থান করে একটি পবিত্র কর্মের সাধ্য-সাধনায় আমৃত্যু লিপ্ত থাকা এ যে কত বিশাল মহান কর্তব্যনিষ্ঠার সুস্পষ্ট পরিচয় বহন করে তা ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। অথচ সেই বিরতিহীন মানবেতর জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন এ মহান মনীষী চিন্তানায়ক। এ যে কত বড় ত্যাগ ও তিতিার ‘মহৎ লড়াই’ তা শুধু ভুক্তভোগী মাত্রই উপলব্ধি করতে সমÑ অন্য কেউ নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আমাদেরকে পরকালের জন্য তৈরি হতে হবে : অ্যাডভোকেট জুবায়ের ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনা ইরানের দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের মানকে উন্নত করতে হবে : আবদুল হালিম বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু মধ্য রাতে, চিন্তিত জেলেরা ভোটে জেতার ৬ মাসের মধ্যেই আজাদ কাশ্মিরকে ভারতের অংশ বানাতে চান যোগী পোরশায় অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু নিহত কালশীতে পুলিশ বক্সে আগুন অটোরিকশা চালকদের ২১ কেজির ভোল মাছ সাড়ে ৩ লাখে বিক্রি ভিন্নভাবে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ জানালো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কটিয়াদীতে চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রবীণ ২ নবীনের লড়াই কোহলির পাকিস্তান সফরের আগ্রহে মুগ্ধ আফ্রিদি

সকল