কুরআন ও হাদিসে কিয়ামতের আলামত

মুসলমানদের ওপর যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা ফরজ, তার মধ্যে আখিরাত তথা পরকাল এবং সেখানকার নিয়ামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মানুষ পার্থিব জগত এবং তার ভোগ বিলাসের মাঝে ডুবে থেকে পৃথিবীর মাধ্যমে পরকালের জীবনে পদার্পণ করার অনিবার্য ঘটনা কিয়ামত ও এর ভয়াবহতার কথা ভুলে যেতে পারে। ফলে আখিরাতের মঙ্গলের জন্য আমল করাও ছেড়ে দিতে পারে। এ জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের আগে এমন কতগুলো আলামত নির্ধারণ করেছেন, যা আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ বহন করে এবং এ বিষয়ে সব প্রকার সন্দেহ দূর করে দেয়। কিয়ামতের ছোট ছোট আলামত প্রায়ই প্রকাশ হয়ে গেছে। যেমনÑ সৎ কাজের আদেশ করা অসৎ কাজের নিষেধ করাকে ছেড়ে দেয়া; আমানতের খিয়ানত করা; অন্যায়হীনতা মানুষরা সমাজের কাছে অন্যায়ের বিচার না পাওয়া; মূর্খ লোক সমাজের নেতা হওয়া; মসজিদের ভেতরে ফাসেকদের আওয়াজ বৃদ্ধি পাওয়া; দরিদ্র ব্যক্তিরা বড় বড় দালানকোঠা বিল্ডিং তৈরি করা; অন্যায়কারীর বিচার না হওয়া; গান-বাদ্য আওয়াজ বৃদ্ধি পাওয়া; আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা; মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া; দুনিয়াবি স্বার্থে ইলম অর্জন করা; মানুষের জন্য মানুষদের থেকে মায়া মহাব্বত ভালোবাসা উঠে যাওয়া ও পর্দাহীনতা ইত্যাদি।
কিয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো প্রকাশ হওয়া, যেমনÑ ইমাম মাহদি আ:-এর আগমন করা। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ লাভ করা, ইয়াজুজ এবং মাজুজের আবিভার্ব হওয়াÑ হজরত হুজাইফা ইবনে আসিদ ফাইল গিফারি রা: বলেন, একদিন আমাদের সমালোচনার মধ্যখানে হুজুর সা: এসে উপস্থিত হলেন। হুজুর সা: বললেন, ‘তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছ? তারা বললেন, আমরা কিয়ামত বিষয়ে কথা বলছি। তিনি বললেন, ১০টি আলামত প্রকাশ হওয়ার আগে কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে না তার পর তিনি সেগুলো উল্লেখ করে বলেনÑ ৬ নম্বরে ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। (সহিহ মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা সে দিনকে ভয় করো, যে দিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।’ (আল-বায়ান)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর তোমরাই তো তারা, যারা নিজদের হত্যা করেছ এবং তোমাদের মধ্য থেকে একটি দলকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দিয়েছ; পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সহায়তা করেছ। আর তারা যদি বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে মুক্ত করো। অথচ তাদেরকে বের করা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’ (আল-বায়ান)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিনÑ এর খবর তো আমার পালনকর্তা কাছেই রয়েছে। তিনি তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও জমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়, যখন তারা তোমাদের ওপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন, বলে দিন এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর কাছে রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।’ (সূরা আরাফ-১৮৭)
কিয়ামত বিষয়ে যদি আমরা হাদিসের দিকে লক্ষ করতে যাই হুজুর পাক সা: বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে শাহাদাত ও মাধ্যমগুলো সমপরিমাণ দূরত্ব রেখে আমাকে পাঠানো হয়েছে।’ (বুখারি)
আবু উমামা বাহেলি রা: বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙে যাবে। একটি ভেঙে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হলো ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হলো নামাজ। (মুসনাদ আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)
আবদুুল্লøাহ রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কিয়ামত যখন কাছে চলে আসবে তখন এমন দিন আসবে যখন মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, জ্ঞান তুলে নেয়া হবে এবং প্রচুর হারজ হবে। হারজ হলো হত্যা।’ (সহিহ বুখারি)
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং মিথ্যাচার বেড়ে যাবে এবং বাজার হবে কাছাকাছি।’ (আহমদ সহিহ)
নিশ্চয়ই কিয়ামতের আগে অন্ধকার রাত্রির মতো ঘনকালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। বিকেলে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য লাভের বিনিময়ে তাদের দ্বীন বিক্রি করে দেবে।’ (মুসলিম/কিতাবুল ফিতান)