২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্ষমা মহৎ গুণ

-

মানুষ সামাজিক জীব। এক সাথে বাস করাই মানুষের ধর্ম। সঙ্গী ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। কারণ, মানুষের মৌলিক কিছু চাহিদা অন্যের মাধ্যমেই কেবল পূর্ণ হতে পারে। এই একত্রে চলতে গিয়ে পরস্পর বিভিন্ন কথাবার্তা ও আচার-আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। এতে একজনের দ্বারা অন্যজন কষ্ট পেতে পারে এটাই স্বাভাবিক।
তবে প্রত্যেকের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমার দ্বারা অন্য কেউ কোনোভাবে কষ্ট না পায়। হাদিসে এসেছে, ‘যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে সেই প্রকৃত মুসলিম’ (সহিহ মুসলিম-৪১)।
সতর্কতার পরও যদি কারো দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে যায় তার জন্য উচিত হলো- তাকে মাফ করে দেয়া। কারো দেয়া কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে না রাখা। ক্ষমা হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা: ক্ষমাকে সর্বোত্তম তিনটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটি গণ্য করেছেন (তারিখে বাগদাদ-১/৩২৯)।
অত্যাচারীকে ক্ষমা করার কথা একাধিক হাদিসে এসেছে। আলী বিন আবু তালেব থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘তুমি নিজের প্রতি জুলুমকারীকে ক্ষমা করে দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে তার সাথে ভালো আচরণ করো এবং নিজের বিরুদ্ধে হলেও সত্যের ওপর অটল থাকো’ (তারগিব তারহিব-৩/২৮৬)।
হাদিসে আরো এসেছে, ক্ষমা করে দেয়ার বিশেষ কয়েকটি ফায়দা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. ক্ষমার দ্বারা তার নিজের অন্তরটা সাফ হয়ে যায়। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। এতে নিজের ভেতর এক ধরনের প্রশান্তি লাভ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ক্ষমাকে আবশ্যক করে নিন আর তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দিন। মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন’ (৭ : ১৯৯)।
হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একে অপরকে ক্ষমা করে দাও। তোমাদের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৮/৮৫)।
২. ক্ষমার দ্বারা ব্যক্তির নিজের সম্মান আরো বেড়ে যায়। সবাই তাকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখে।
৩. বান্দাকে ক্ষমা করলে আল্লাহ নিজে তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালাও ক্ষমাশীল ও দয়ালু’ (৬৪ : ১৪)।
দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন এক বান্দাকে বলবেন, ‘জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখো’। সে দেখে বলবে, হে আমার রব! আমি স্বর্ণ-রুপার সুরম্য ভবন আর অট্টালিকা দেখছি। কোন নবী, কোন সিদ্দিক বা কোন শহীদ এগুলোর অধিকারী? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘যে ব্যক্তি এর মূল্য দিতে পারবে সে-ই এর মালিক!’ লোকটি বলবে, এর মূল্যের মালিক কে হতে পারবে? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তুমিই পারবে’। সে জিজ্ঞেস করবে, কিভাবে? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তুমি (দুনিয়াতে তোমার ওপর অবিচারকারী কোনো) ভাইকে ক্ষমা করে দিলেই এর মালিক হবে’ (বিদায়া নিহায়া-৮/৪১)।
ক্ষমা সমাজে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার মোক্ষম এক উপায়। একজন অপরজনকে মেনে নিতে না পারা, ক্ষমা করতে না পারা আজকের সামাজিক বিশৃঙ্খলা, ফ্যাসাদের অন্যতম মূল কারণ।
আসুন আমরা উদার হই। একে অপরের প্রতি সহনশীল হই। ক্ষমাশীল হই। একই সাথে অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ করা থেকে বিরত থাকি। প্রথমে নিজেকে অন্যায় আচরণ থেকে দূরে রাখা তারপর ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া এবং কারো হক নষ্ট করলে তা শত ভাগ ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আর যখন কোনো ভাই অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে তখন তাকে ক্ষমা করার মাধ্যমে নিজেকে মহৎ গুণের অধিকারী করার সুযোগ হাত ছাড়া করব না। সবাই সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন!
লেখক : অনুবাদক ও প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement