লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- মো: আবদুল গনী শিব্বীর
- ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৩২
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো ঈমানের মূল ভিত্তি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদ, একচ্ছত্র ক্ষমতা, বড়ত্ব ও আধিপত্য এবং উপাসনার যোগ্য একমাত্র ইলাহÑ এ কথার ঘোষণা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর মধ্যে নিহিত। এ কথা সর্বশ্রেষ্ঠ কথা। এ কালেমার ফজিলত অনেক বেশি। পবিত্র কুরআন মাজিদে এ সম্পর্কে ৩৭টি স্থানে বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত-২৫৫) ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কিয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চেয়ে বেশি সত্য কথা আর কার হবে’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮৭)! ‘এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কারো বন্দেগি নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি’ (সূরা তাওবাহ, আয়াত-১২৯)।
পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ফজিলত সম্পর্কে এসেছে। ‘খাদেমুর রাসূল’ খ্যাত বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিতÑ নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঈমানদারদের একত্র করবেন, তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে কোনো সুপারিশ যদি নিয়ে যেতাম তাহলে তিনি আমাদের এ স্থান থেকে বের করে শাস্তি দিতেন। এরপর তারা আদম আ:-এর কাছে গিয়ে বলবে, হে আদম আ:! আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? অথচ আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে তিনি তাঁর ফেরেশতা দিয়ে সিজদা করিয়েছেন। আর আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। কাজেই আপনি আমাদের রবের কাছে সুপারিশ করুন, যেন এ স্থান থেকে আমাদের তিনি স্বস্তি দেন। আদম আ: তখন বলবেন, এ কাজের জন্য আমি উপযুক্ত নই। তোমরা বরং নূহ আ:-এর কাছে যাও। যেহেতু তিনিই আল্লাহর প্রথম রাসূল। যাঁকে তিনি জমিনবাসীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা নূহ আ:-এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং আল্লাহ খলিল ইবরাহিম আ:-এর কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহিম আ:-এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মূসা আ:-এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ তাওরাত দিয়েছিলেন এবং তাঁর সাথে তিনি সরাসরি কথা বলেছিলেন। তারা তখন মূসা আ:-এর কাছে আসবে। মূসা আ:ও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। তোমরা বরং ‘ঈসা আ:-এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, কালেমা ও রূহ। তখন তারা ঈসা আ:-এর কাছে আসবে। তখন ঈসা আ: বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ সা:-এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা, যাঁর আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তারা সবাই আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে এর অনুমতি দেয়া হবে। আমি আমার রবকে যখন দেখতে পাবো, তখনই আমি তাঁর সামনে সিজদায় পড়ব। আল্লাহ তাঁর মর্জি অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দেবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হবে। কি চান, দেয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমার রবের শিখিয়ে দেয়া প্রশংসার দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপর আমি শাফায়াত করব। আমার জন্য একটি সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। এরপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো। তারপর আমি ফিরে আসব। যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখতে পাবো তখন তাঁর জন্য সিজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহ মর্জি মোতাবেক যতক্ষণ আমাকে এভাবে রাখতে চাইবেন রেখে দেবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হবে। চান, দেয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমার রবের শিখিয়ে দেয়া প্রশংসার দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব এবং সুপারিশ করব। তখনো আমার জন্য একটি সীমা নির্দিষ্ট করা হবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো। তারপর আমি আবার ফিরে আসব। আমি এবারো আমার প্রতিপালককে দেখামাত্র সিজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মর্জি মোতাবেক যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে ওই অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হবে। চান, দেয়া হবে।
সুপারিশ করুন, কবুল করা হবে। তখন আমার রবের শেখানো প্রশংসার দ্বারা প্রশংসা করে শাফায়াত করব। তখনো আমার জন্য একটি সীমা নির্দিষ্ট করা থাকবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো। অতঃপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলব, হে আমার রব! এখন একমাত্র তারাই জাহান্নামে বাকি আছে, যাদেরকে কুরআন আটক করে রেখে দিয়েছে। আর যাদের ওপর স্থায়ীভাবে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে।’ নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে, আর তার দিলে একটি জবের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপর বের করা হবে জাহান্নাম থেকে তাদেরকেও, যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং তার দিলে একটি গমের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে। জাহান্নাম থেকে (সর্বশেষ) তাকে বের করা হবে, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং তার দিলে অণু পরিমাণ মাত্র ঈমান আছে (সহিহ বুখারি, হাদিস-৬৯০৬)।
কুরআন কারিম ও হাদিসের ভাষ্যমতে আমরা যা জানলাম তা হলোÑ ক. ঈমানের প্রথম কথা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; খ. এ কালেমা বিশ্বাসীকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেবে; গ. এ কালেমা পাপীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবে; ঘ. এ কালেমা ঈমানদারের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেবে; ঙ. এ কালেমা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির; চ. এ কালেমা মৃত্যুকে সহজ করে দেয়; ছ. এ কালেমা বিশ্বাসীকে আল্লাহপাকের নিকটবর্তী করে; জ. এ কালেমা কিয়ামতের ময়দানে বিশ্বাসীকে আরশের ছায়া লাভে ধন্য করে।
লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা নোয়াখালী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা