একটি প্রশান্ত আত্মা
- মুহাম্মদি আইয়ুব সুরুতি
- ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০
(মুহাম্মদি আইয়ুব সুরুতির উর্দু রচিত বই ‘ক্বালাবুল সালাম’-এর ইংরেজি ‘অ ঝড়ঁহফ ঐবধৎঃ’ থেকে বাংলা অনূদিত। অনুবাদ করেছেন ফাতিমা আজিজা।) ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোনো কাজে আসবে না’; সেদিন উপকৃত হবে শুধু সে, যে আল্লøাহর কাছে আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।’ (সূরা আশ-শুআরা : ৮৮-৮৯) যখন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সম্পদ, সন্তান এবং ব্যবসায় দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তখন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমাদের আসল ঠিকানা পরকালকে ভুলে এই বিদেশবিভুঁইয়ের জীবনে চাকচিক্য আর ঐশ্বর্যে মত্ত হয়ে থাকা যাবে না । আর যে এই দুনিয়ার চাকচিক্যে মোহিত হয়ে যায় তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নির্বোধ আর কে হতে পারে। আমরা কি পারি এখানে আজীবনের জন্য থেকে যেতে কিংবা চিরতরে আলাদা হয়ে যেতে? কবর হচ্ছে একটি নিস্তব্ধ আবাস। এই সংসার জীবন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে একদিন আমাদের চলে যেতে হবে। ‘ভাগ্য উপনীত হয়ে গেছে অসচেতনকে সচেতন করেছে এটা চলন্ত জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে’ কতই না পরিকল্পনার হালখাতা খুলে বসে ছিল সে, তার ভাবনায় ছিল ঘরবাড়ি তৈরি করে সেখানে সুখের দিন কাটাবে, কিন্তু যখন মৃত্যু এসে ধরা দেয় তখন তার অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় অথচ সে আর দেখতে পায় না। তার চোখ থেকেও সে দেখতে পায় না। তার জিহ্বা থেকেও সে স্বাদ পায় না। তার হাত থেকেও সে অর্থ-সম্পদের হিসাব করতে পারে না। তার সমস্ত ইন্দ্রিয়শক্তি হ্রাস পেয়েছে। বিচারপতি আকবর ইলাহাবাদি বলেছিলেন : ‘নিয়তির কাছে সমস্ত ইন্দ্রিয়শক্তি অকার্যকর ওহে আকবর যদিও তোমার নয়ন যুগল উন্মুক্ত হয়ে আছে; তুমি দর্শনে অপারগ।’ তিনি আরো বলেন : ‘কেউ মুদ্রিত বর্ণমালা পড়তে ব্যস্ত, আবার কেউ নলের সুরা পানে ব্যস্ত।’ যদিও তারা শাইখের বাড়িতে অবস্থান করছিল, কিন্তু তারা দ্বীন সম্পর্কে কিছু শিখতে পারেনি। তারা মহাবিদ্যালয় থেকে বেড়ে উঠেছে; আর ভদ্রলোক সমাজের অফিসে বসে মৃত্যুবরণ করেছে। এ উপায়ে কি করে কেউ দ্বীন অর্জন করতে পারে? একজন কবি বলেছেন : ‘দ্বীন গঠিত হয়েছে ধর্মের কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে, বই, বক্তব্য কিংবা সম্পদের মাধ্যমে এটা গঠিত হয়নি।’ একজন ব্যক্তি কতটুকু অকেজো হতে পারে এটা কোনো বিষয় নয়। তাকে একজন ধার্মিক ব্যক্তির সান্নিধ্যে যেতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই এর ফলাফল চোখে দেখার মতো হবে। যদি সে দিনরাত বলে : আমি অযোগ্য হয়ে থাকব। আমি কখনো যোগ্য হতে পারব না। যদিও তার সাথী ওয়ালি ঘোষণা করে যে : তুমি অযোগ্য কিন্তু তুমি যদি আমার সাথে থাকো, তবে তুমি যোগ্য হয়ে উঠবে। এটা একটি দেশী আমকে ভালো মানের কোনো আমের সাথে কলম দেয়ার মতো। কৃষক খুব সতর্কতার সাথে এর মূলকে অন্য আমের মূলের সাথে জোড়া লাগায় যাতে একটির সাথে আরেকটি পরিপূর্ণভাবে মিশে যায়। যদিও দেশী আমটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনবার করে বলে যে : আমি কখনো উন্নতমানের আমের মতো হতে পারব না; এটা উন্নতমানের আমের মতোই গুণসম্পন্ন হয়ে উঠবে সে যতই চেঁচাতে থাকুক। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনি কতটা অযোগ্য বা অশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি সেটা কোনো ব্যাপার না, বরং আপনিও আল্লøাহর প্রিয় ব্যক্তি হতে পারেন। একজন আল্লাহর প্রিয় বান্দার সাথে মিশলে যে কেউ আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে। আজ আমরা ভালো সঙ্গের অভাবে কাঁদছি এবং এর কারণে আমাদের মাঝে ধর্মহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি হয়েও আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হতে পেরেছে শুধু ভালো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে। হজরত ডক্টর আবদুল হাই রহ.-এর শহর ভারতের জৈনপুরে একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন। নেশাগ্রস্ত লোকটি ছিল ভারতের একজন অভিজ্ঞ কবি। নেশাগ্রস্ত সেই ব্যক্তিটি হজরত আবদুুল হাইকে রহ: প্রশ্ন করলেন, আপনি তো এলএলবি অর্জন করেছেন এবং আপাদমস্তক একজন আধ্যাত্মিক গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি, তাহলে বলুন তো হজরত থানভি রহ:-এর খলিফা কে ছিলেন। অনেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি আপনার কাছ থেকে আধ্যাত্মিকভাবে উপকৃত হন আর আপনার পোশাক আশাক একজন ধার্মিক ব্যক্তির মতোইÑ যেমন লম্বা জামা আর টুপি। তিনি ডক্টর আবদুল হাইকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথা থেকে এই দানশীলতার দীক্ষা পেলেন, আমার মতো একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি কি আল্লøাহর প্রিয় বান্দাহ হতে পারে? ডক্টর সাহেব বললেন, ‘আপনিও হজরত থানভি রহ.-এর কাছে যেতে পারেন যার উজ্জ্বল সঙ্গ পেয়ে হাজার হাজার মানুষ আল্লøাহর প্রিয় হতে পেরেছে। আপনিও আল্লøাহর প্রিয় বান্দাহদের একজন হতে পারবেন যদি আল্লøাহ চান।’ যিনি একজন ব্যক্তিকে সুপথ দেখাতে পারেন তিনি হলেন আল্লাহ। এটা ঠিক এমন একটি বিষয় যেমন আল্লøাহ কাউকে সন্তান দিলেন কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেরও সেখানে প্রয়োজন। কিছু মানুষ বলেন, তারা দূর থেকে যোগাযোগের মাধ্যমে আল্লøাহর প্রিয় বান্দাহ হতে চান। হাকিম উল উম্মাত (মওলানা আশরাফ আলী থানভি রহ:) বলেন, যদি স্ত্রী করাচিতে আর স্বামী লাহোরে অথবা স্বামী ইংল্যান্ড এবং স্ত্রী গুজরাটে অবস্থান করে এবং তারা উভয়েই দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করতে থাকলে পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে কি তারা সন্তানের আশা করতে পারেন? যদি কেউ নবী সা:-এর যুগে বাস করেন এবং তিনি তাঁর কাছে অসংখ্য পত্র লিখেন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ব্যতীত বা তাঁর সাথে কোনো সময় অতিবাহিত করা ছাড়া কি তাকে সাহাবি বলা যাবে? নবী সা: এর সঙ্গ ব্যতীত কেউ সাহাবি হতে পারেন না। ঠিক একইভাবে, আল্লøাহর প্রিয় বান্দাহর সঙ্গ ছাড়া কেউ আল্লøাহর প্রিয় বান্দাহ হতে পারেন না। আমার প্রথম শাইখ, শাহ আবদুল গনি রহ: যার সঙ্গ হজরত মাওলানা আবরাম হক রহ:-এর সাথে, অতি সামান্যই থেকেছেন। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী থেকে মিষ্টান্ন সংগ্রহ করা যায়। কাবাব বিক্রেতার কাছে কাবাব পাওয়া যায়। কাপড় ব্যবসায়ী থেকে কাপড় পাওয়া যায়। আম বিক্রেতা থেকে আম। সেইভাবে, আল্লøাহর বন্ধুর মাধ্যমে আল্লøাহকে পাওয়া যায়, তোমার যদি আল্লাহর প্রেমের পিপাসা থাকে, তুমি হাজার মাইলও দৌড়াতে পারবে তাঁর প্রেমের সমুদ্রের পানি পান করতে। এর পর আগামী দিন
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা