২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অহঙ্কার ও আমাদের করণীয়

-

[এটি নয়া দিগন্তের ইসলামী জীবন পাতার জন্য ড. আতীকুর রহমানের শেষ লেখা। তার আগের লেখাটি ছিল ‘হজরে আসওয়াদ’-এর ওপর। ৫ জুলাই লেখাটি প্রকাশ হয়। বাড্ডা আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ড. আতীক মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ৮ জুলাই সর্বশক্তিমানের কাছে চলে গেছেন। জীবনমৃত্যুর সিদ্ধান্ত কেবলই সর্বশক্তিমানের। আমরা স্থায়ী জীবনে তার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে জান্নাতের সুশীতল আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমরা সবাই আল্লাহর জন্য, তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।]
সুন্দর এ পৃথিবীতে অগণিত মানুষের বাস। মহান আল্লাহ তাঁর এ সৃষ্টি জগত পরিচালনায় সমাজে ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, সাদা-কালো এক কথায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা তাদের পদ, বিত্তবৈভব কিংবা ক্ষমতা বলে নিজেদের অন্যদের তুলনায় বড় মনে করে অহঙ্কারবশত অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। ইসলাম অহঙ্কারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে তাকওয়ার গুণ অর্জনে উৎসাহিত করেছে।
অহঙ্কার কাকে বলে : অহঙ্কারের আরবি প্রতিশব্দ ‘কিব্র’। যার অর্থ বড়ত্ব। অন্যের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করাই এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য। এর পারিভাষিক অর্থ, সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।
অহঙ্কার কার বৈশিষ্ট্য : অহঙ্কার শয়তানের বৈশিষ্ট্য। সৃষ্টিজগতের প্রথম মানব আদম আ: কে সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ করেছিলেনÑ তোমরা আদমকে সিজদা কর। সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা শয়তান মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল। কুরআনের ভাষায়, ‘সে (শয়তান) অস্বীকৃতি জানাল এবং অহঙ্কার করল। সুতরাং সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (বাকারা : ৩৪)
অভিশপ্ত ইবলিস শয়তানই সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির সাথে অহঙ্কার করেছিল। অহঙ্কার এমন বিষয়, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য শোভা পায় না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, সুমহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই গৌরব আমার পোশাক এবং অহঙ্কার আমার চাদর। অতএব, যে তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি শাস্তি দিয়ে ছুড়ে দেবো।’ (মুসনাদে আহমাদ) কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (লুকমান : ১৮)
অহঙ্কারীদের শীর্ষে যারা : আমরা দেখতে পাই অহঙ্কারীদের ভেতর শীর্ষে আছে ইবলিস। ইবলিস শয়তান বলেছিল, আমি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ বললেন, অহঙ্কার করা তোমার উচিত নয়, যাও লাঞ্ছিত হয়ে (জান্নাত থেকে) বের হয়ে যাও। (দ্র. সূরা আরাফ : ১২-১৮)
মানুষের ভেতর অহঙ্কারী ছিল নমরুদ, ফেরাউন, হামান, আবু জাহেল প্রমুখ। অহঙ্কারে ফেরাউন বলেছিল, আমি তোমাদের বড় রব। এছাড়াও আবু লাহাব, উতবা, শায়বা প্রমুখও দম্ভভরে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। আজও যারা নিজেদের অহঙ্কারী ভেবে জীবন পরিচালনা করছে, তারা নমরুদ, ফেরাউন, হামান, ও আবু জেহেলদের সাথী হয়েই পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে।
অহঙ্কার প্রকাশের মাধ্যম : অহঙ্কার হৃদয়ের রোগ হলেও এর প্রকাশ বাহ্যিক আচরণের মাধ্যমেই হয়। অন্যদের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য প্রকাশের মাধ্যমে সে তার অহঙ্কার প্রকাশ করতে থাকে। কপাল কুঁচকে থাকে অনেক সময়। চেহারায় অন্য রকম একটা ভাব নিয়ে আসে। অন্যদের প্রতি চরম এক ঘৃণা ফুটে ওঠে তার কথাবার্তা ও আচরণে।
অহঙ্কারের ভয়াবহ পরিণতি : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ এক লোক বলল, ‘মানুষ তো ভালোবাসে যে, তার পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক (তাহলে)’? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহঙ্কার নয়, বরং) অহঙ্কার হলো, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।’ (সহিহ মুসলিম)
‘কিয়ামতের দিন অহঙ্কারীদের ছোট ছোট পিঁপিলিকার ন্যায় মানুষের আকৃতিতে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদের জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্র করা হবে, যার নাম হবে বুলাস। আগুন তাদের চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামিদের শরীরের ঘাম তাদের পান করতে বাধ্য করা হবে।’ (সুনানে তিরমিজি)
অহঙ্কারীর ঠিকানা জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, সুতরাং, তোমরা দ্বারগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করো, সেখানে স্থায়ী হওয়ার জন্য; দেখো অহঙ্কারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।’ (নাহল : ২৯)
আমাদের করণীয় : আল্লাহ বলেন, ‘অহঙ্কারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না।’ (লোকমান : ১৮) তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে অহঙ্কার পরিত্যাগ করে তাকওয়া অর্জন করা। ইবন আব্বাস রা: বলেন, লোকে বলে আমি সম্ভ্রান্ত। অথচ সম্ভ্রান্ত হওয়া বা আভিজাত্য অর্জন করতে হয় তাকওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের ভেতর সবচেয়ে সম্মানিত হচ্ছে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তি। (হুজুরাত : ১৩)
কেউ তাকওয়ার গুণ অর্জন ছাড়া অহঙ্কার মুক্ত হতে পারে না। সম্পদ, সৌন্দর্য, জ্ঞান, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও অন্য কোনো গুণ নয়, একমাত্র তাকওয়া মানুষকে অহঙ্কার মুক্ত করে অভিজাত করে। আর তাকওয়া যার অর্জিত হবে সে কখনো অন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না। নিজেকে সে কখনো অভিজাত বা সম্ভ্রান্ত দাবি করবে না। কারণ গর্ব করা ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয়।


আরো সংবাদ



premium cement
আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ

সকল