অনিয়ম ও অসাধুতায় ন্যায্যমূল্যে দুধ-ডিম বিক্রির সুফল মিলছে না ফরিদপুরে

করোনাকালে একদিকে খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যদিকে জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সরকার ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মাধ্যমে প্রাণিজাত পণ্য বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত শুরু হওয়া এ বিশেষ প্রকল্পে এখনো কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না জনগণ। বরং প্রচারণার অভাব, পাশাপাশি অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আমিষ তথা দুধ, ডিম ও মাংসজাত পণ্যের ঘাটতি মেটাতে সরকার খামারীদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে এই প্রকল্পটি চালু করে এক সপ্তাহ আগে। এখানে প্রতি কেজি গরুর দুধ ৬০ টাকা, প্রতি পিস মুরগির ডিম ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬ টাকা, মুরগির মূল্য সোনালী প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে এসব পণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট খামারীদের জনপ্রতি প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হয় শুধুমাত্র পরিবহন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বাবদ। ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাদে তারা ৪ হাজার ১০০ টাকা পাচ্ছেন।

ফরিদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার ১০ জন খামারী এই বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছয়জন এবং বোয়ালমারী, মধুখালী, ভাঙ্গা ও সালথা উপজেলায় একজন রয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, জেলায় প্রায় এক হাজারের মতো গরু খামারী থাকলেও এই সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ১০ জন। তারা প্রণোদনার টাকা ঠিকই তুলে নিচ্ছেন কিন্তু জনসাধারণ ন্যায্যমূল্যের এসব প্রাণিজাত পণ্য পাচ্ছে না। প্রচারণার অভাবে অনেকে জানেনই না সরকার এমন একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছে।

ভোক্তারা অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত দুধ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য এই ভ্রাম্যমান দোকানে মিলছে না। আর যেই পরিমাণ দুধ বিক্রির কথা সেই পরিমাণও বিক্রি করা হচ্ছে না। দু’একটি স্থানে মুরগির ডিম পাওয়া গেলেও কোথাও গোশত বিক্রি হচ্ছে না। এসব ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনাতেও অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লাহ মো: আহসান জানান, গত মঙ্গলবার থেকে জেলায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে ১০ জন খামারীদের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদেরই এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, প্রতিদিনই এই কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তিনি মধুখালী উপজেলার ভ্রাম্যমান দোকান পরিদর্শনে যান।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মীর কাশেম বলেন, গত বছর ফরিদপুরে করোনার কারণে ভ্রাম্যমান দোকানে করে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রির একটি উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সরকার সারাদেশে এবছর এই প্রকল্প গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে হতে এটি শুরু হলেও ফরিদপুরে তিন দিন যাবত চালু হয়েছে। শহরের ঝিলটুলীতে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রি কর্ণারের সামনে তার ভ্যান গাড়িতে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে প্রায় সাড়ে ৪০০ লিটার দুধ তিনি বিক্রি করছেন।

ভ্রাম্যমান পণ্য বিক্রির অনুমতিপ্রাপ্তদের একজন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করে সদর উপজেলার বিলমামুদপুর এলাকার মাইশা ডেইরি ফার্মের মালিক সবুজ বলেন, আতিকুর প্রণোদনার টাকা তুললেও ভ্রাম্যমান গাড়িতে কোনো পণ্য বিক্রি করেন না। এমনকি তিনি মাইশা ডেইরি ফার্মের দুধ বিক্রেতার অটোরিকশাকে ভ্রাম্যমান দুধ বিক্রির দোকান দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে ছবি জমা দিয়েছেন।

মো: ইসাহাক নামে আরেকজন গরু খামারী বলেন, জেলায় অনেকে প্রকৃত গরুর খামারী থাকলেও মুষ্টিমেয় কিছু লোক গত দুই বছর যাবত সরকারের এসব বিশেষ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অফিসের একটি অসাধু চক্র জড়িত। তারা সরকারের প্রণোদনা নিলেও ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনা করছেন না। দু’একটি স্থানে ভ্রাম্যমান এসব প্রাণিজাত পণ্যের দোকান দেখা গেলেও তা খুব কম সময়ই সেসব অটো বা ভ্যান দেখা যায়। কোথাও মাইকিংও করা হয় না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল্লাহ মো: আহসান এ ব্যাপারে জানান, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে দু’একজনের জন্য এমন একটি ভালো উদ্যোগ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।

তিনি বলেন, বুধবার ১০টি দোকান হতে প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ ও ৭ হাজার ৪৪০০ পিস মুরগির ডিম বিক্রি করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনলাইন ফরমে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এসব দোকানে মুরগি, গরু ও খাসির গোশত এমনকি ঘি বিক্রির জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।