ফেজবুক পোস্টে এক যুগ পর ভারসাম্যহীন দূর্গা পেল পরিবার
- মো: হুমায়ূন কবীর, নাগরপুর (টাঙ্গাইল)
- ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০১
যখন পেপার-পত্রিকা ও মিডিয়া জুড়ে শুধু ধর্ষণের ছড়াছড়ি। রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলীও রেহাই পাচ্ছে না বিবেকহীন মানুষ নামের পুশুদের হাত থেকে। এমনই একটি সময় যখন আমরা পার করছি ঠিক তখনি “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” কথাটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান রনি। পেশায় ‘স’ মিলের মালিক তিনি ও ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি। নাম ঠিকানা অজানা মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়েকে আদর যত্নে লালন পালন করে দীর্ঘ ১১ বছর পর তুলে দিলেন তার পরিবারের কাছে। রনি দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে আশ্রয় দিয়ে তার সকল দায়ীত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। একই সাথে তার পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালান। কোনো উপয় না পেয়ে রনি ফেসবুকে মেয়েটির সন্ধান পেতে ছবিসম্বলীত একটি পোস্ট দেন। ফেসবুকের বদৌলতে পাওয়া যায় মেয়েটির পরিবারের সন্ধান।
বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের ধুবড়িয়া তেরাস্তার মো: জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামের অফিসে পরিবারের সকলকে পেয়ে দূর্গা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে ২০১০ সালের দিকে ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা যেত। এর মধ্যে ডিজিটাল বলরামপুর বাজার, পুরান বাজার ও ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে দেখা যায় ভারসাম্যহীন ওই মেয়েকে। মেয়েটিকে স্থানীয় লোকজন নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুই বলতে পারতেন না। ভারসাম্যহীন মেয়েটি যখন কোথাও আশ্রয় পাচ্ছিলেন না, তখন মেয়েটি ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে এসে আশ্রয় নেন। ওই সময় মেয়েটির লালন পালনের দায়িত্বভার স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নেন। তিনি নাম পরিচয়হীন মেয়ের নাম দেন লাইলী। একই সাথে মেয়েটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পান তিনি। পরে জানা যায় মেয়েটির আসল নাম দূর্গা রানী স্বামীর নাম রমেশ, বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনী। মেয়েটির বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনী।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলার শান্তাহার উপজেলার সুইপার কলোনী গ্রামের রতন হরিজনের ছেলে নাদিম হরিজন, আরমান হরিজন, শাকিল হরিজন, প্রদীপ হরিজন ও রিপন হরিজন বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর রনি ভাই আমাদের বোনকে সযত্নে লালন-পালন করে আজ আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এটি মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। রনি ভাইকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।’
এ সময় রনি অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মেয়েটি যেন বাকি জীবনটা তার পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে। সৃষ্টিকর্তার কাছে ওই প্রার্থনা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘দূর্গার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা আমি করবো।’
এ ব্যাপারে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো: আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, ‘আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছেন। মানবতা আজও বেঁচে আছে এটি তারই সাক্ষ্য বহন করে। দিনাজপুরে বসবাসকারী আমার ভাই দীলিপের সাথে দূর্গার (লাইলী) বিষয়ে আলাপ করলে, দিলিপ তার ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট করলে তার ফেসবুকের শত শত বন্ধু বিষয়টি শেয়ার করে।’
একপর্যায়ে, হরিজন সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ হওয়ায়, পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দূর্গাকে (লাইলী) তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় নাগরপুর থানার এসআই মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, মানবতার কাছে পৃথিবীর সকল আইন তুচ্ছ। রনি ভাইয়ের মানবতায় ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটি মানবতার এক অনন্য উদাহরণ, এ উপজেলায় দৃষ্টান্ত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা