২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাগরপুরে অপরিকল্পিত নদী খননের ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন

নাগরপুরে অপরিকল্পিত নদী খননের ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন - ছবি : নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিতভাবে ধলেশ্বরী শাখার নোয়াই নদী খননের অভিযোগ উঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় অনেকে বসতভিটা-ফসলি জমি হারাতে বসেছে। প্রবল বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেবে গেছে বাড়ির আঙিনা, ঝুলন্ত অবস্থায় আছে কাচা পাকা বসতবাড়ি। নদীর পাড় ভেঙে দেড় শতাধিক গাছপালাসহ ফসলি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। শতাধিক পরিবারের চোখে মুখে হতাশার ছাপ লেগে গেছে নতুন করে ভাঙনের ফাটল দেখা দেয়ায়। উপজেলার সদর, গয়হাটা, সহবতপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বিক্ষুব্ধ মানুষ নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে যাতায়াতের রাস্তা, মাদরাসা, বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীনের আশঙ্কা করছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী অবকাঠামো, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কৃষি-অকৃষি জমি, ফসলাদি, জনসাধারণের ঘরবাড়ি ইত্যাদি রক্ষা পাওয়ার কথা থাকলেও কোনটি রক্ষা পাচ্ছে না। বরং ওই প্রকল্প অপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করায় অনেকে বসতভিটা-ফসলি জমি হারাতে বসেছে। এ যেন খাল কেটে কুমির আনা হয়েছে বলে আক্ষেপ দুই পারের ভুক্তভোগীদের।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ধলেশ্বরীর হাজীর ব্রিজ বিলের পাড়ের পয়েন্ট থেকে শাখা নদীর পয়েন্ট বাবুপুর লাউহাটি পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু করেছিল। দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ খনন কাজ করেছে ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার শাহীন আহম্মেদ।

গত কয়েক দিন সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গেল বন্যার আগে ধলেশ্বরী নদীর চ্যানেল থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদী পাঁচ থেকে ছয়টি ভেকু দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খনন শুরু করে ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই নদী এলাকা থেকে মাটি খনন করে নদীতে পানি প্রবাহের জন্য চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এটি দিয়ে মূল নদীর সঙ্গে পানি প্রবাহের সংযোগ দেয়া। কাজ শুরু হওয়ায় নদী পাড়ের মানুষ খুশি হলেও অপরিকল্পিতভাবে নদী খননে তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, এভাবে খননে ক্ষতিগ্রস্ত হব সেটা আমরা না বুঝলেও তাদের বুঝা উচিৎ ছিল। এখন ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোড় দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী ও নদী পারে মানুষের।

গয়হাটা ইউনিয়নের ঘিওরকোলের দিন মজুর জসিম উদ্দিন (৭০) বলেন, নদী খননে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। ২৫ বছর ধরে ২২ শতাংশ জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। নদী খননের পর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রায় ১২ শতাংশ বসতবাড়ির ভিটা নদীতে চলে যাচ্ছে। ঝুলন্ত অবস্থায় ঘরটি টাকার অভাবে সরাতেও পারছি না। বাকিটুকুতেও ফাটল ধরেছে।

একই এলাকার রেফাজ উদ্দিন (৭২) বলেন, সরকারি কলেজের ৪র্থ শ্রেণীর চাকরির অবসরের টাকা দিয়ে পাকা করে ঘর নির্মাণ করেছিলাম বাকি জীবন দুই ছেলে সন্তান নিয়ে একটু সুখে দিন কাটাবো বলে। সুখ তো দুরের কথা মাথা গোজার ঠাইটুকু থাকবে কিনা জানি না। অপরিকল্পিত নদী খননে এবারের বন্যার পর প্রায় ১০ শতাংশ জমি নদীতে বিলীন হয়ে শখের পাকা ঘরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নাগরপুর সদর ইউনিয়নের দুয়াজানি গ্রামের জব্বার আলী (৭০) (অবঃ, বিআইডব্লিউটিসি) অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিত নদী খননে ক্ষতিগ্রস্ত তিনি নিজেও এবং এ গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার নদীতে ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে। সচেতনমহল বাধা দিলেও কাজ হয়নি। বরং আরো বেশি করে খনন করেছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি।

গয়হাটা ঘিওরকোলের মহিলা ইউপি সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, সরকারি নির্দেশনায় কেউ অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। কিন্তু দিন দিন যে হারে ক্ষতি হচ্ছে ভবিষ্যতে এ নদী ভাঙন থেকে নিজে রক্ষা পাব কি না তাও জানি না। অপরিকল্পিত নদী খননে অত্র ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ভাঙন হুমকির মুখে এবং প্রায় ১০০ শতাংশ ফসলি জমি গাছপালাসহ নদীতে বিলীন হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষে তিনিও সরকারের কাছে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানে জোর দাবি জানান।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: হুমায়ূন কবীর নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বছর বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। উপজেলায় ২৪৮টি গ্রামের মধ্যে পাইকশা-মাইঝাইলসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম বিভিন্ন জায়গায় নদীতে তলিয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে না পাওয়া গেলে ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রবিউল আওয়াল নয়া দিগন্তকে জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বসহকারে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত

সকল