১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


দলিত সম্প্রদায়ের প্রথম গ্র্যাজুয়েট সনু রানী

সনু রানী দাস - ছবি : নয়া দিগন্ত

সরু গলি। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। গিঞ্জি গিঞ্জি ঘর। নারায়ণগঞ্জের টানবাজার সংলগ্ন বস্তি এলাকায় কয়েক যুগ ধরে বসবাস করছে দেড় শ’ পরিবার। তাদের ভাষা বাইরের মানুষ বুঝে না। আবার বাংলা ভাষাটা ওদের কাছে ভয়ের। নিজেদের গণ্ডির বাইরে এরা মানুষের সাথে তেমন মিশতে পারে না। মানুষও তাদের পরিচয় জানার পর দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। উঁচুতলার লোকজন থেকে ‘চা’ ওয়ালাও তাদের দেখে অবজ্ঞা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল করে। কারণ তারা সুইপার তারা দলিত সম্প্রদায়। 

সেই দলিত সম্প্রদায়ের এক তরুণী অবজ্ঞাকে ডিঙ্গিয়ে নিজেই তৈরি করেছে আকাশ ছোঁয়ার গল্প। নাম তার সনু রানী দাস। সমাজে যাদের মর্যাদাকে মূল্যায়ন করা হয় না। সেই সনু রানী উচ্চশিক্ষায় গন্ডি পেরিয়ে নিজেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জ দলিত সম্প্রদায়ের একমাত্র উচ্চশিক্ষিত সনু রানী স্নাতক (গ্র্যাজুয়েট) পাস করে স্নাতকোত্তর (এম এ) প্রথমপর্ব শেষ করে এখন শেষ পর্বে পড়ছেন। 

নারায়ণগঞ্জের টানবাজার সুইপার কলোনির প্রথম স্নাতক (গ্র্যাজুয়েট) তিনি। গত শনিবার সুইপার কলোনির একটি ঘরে তার সাথে নয়া দিগন্তের এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়। সনু রানী দাস জানান, সুইপার কলোনির শিশুরা জানতেই পারছে না ওদের জন্য পৃথিবীতে কত বিস্ময় অপেক্ষা করছে। অথচ বাংলা ভাষাটাই ওদের কাছে ভয়ের বিষয়। পড়াশোনায় আনন্দ পায় না। আমরা এই শিশুদের বিস্ময়ের সন্ধান দিতে চাই। প্রাথমিকপর্যায়ে ভালোভাবে বাংলা শেখাতে পারলে ওরা নিজেরাই নিজেদের স্বপ্নের জন্য ছুটবে।

এসব নিয়ে বহু দিনের ভাবনা তার। কলোনির সঙ্কটের পাশাপাশি কথায় কথায় সনু তার নিজের জীবনের গল্প বলেন। বলেন, বাংলাদেশে এখনো একজন নারীকে উঠে আসতে হলে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। আর সুইপার কলোনিতে জন্ম নেয়া একটি শিশুর জন্য ভিন্ন ভাষায় পড়াশোনা করাটা আরো কঠিন। সনু ও তার দুই বান্ধবী মিনা ও পূজা নারায়ণগঞ্জের হরিজনদের মধ্যে প্রথম এসএসসি পাস করেন। তারা ২০০৬ সালে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে এইএএসসি পাস করেন। এক বছর বিরতি দিয়ে দিয়ে ২০১০ সালে ডিগ্রিতে ভর্তি হন সনু রানী। ২০১৪ সালে স্নাতক পাস করে সে। এরপর স্নাতকোত্তর (এম এ ) প্রথম পর্ব পাস করে এখন ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার অপেক্ষায়।

জানা গেছে, ১৫০টি পরিবারের এই কলোনিতে ১৯৬৪ সাল থেকেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তবু ২০০৬ সালের আগে সেই কলোনির কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারেননি। সনু রানীর মতে, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, পরিবারগুলোর অসচেতনতা ও অর্থনৈতিক দৈন্যই এর জন্য দায়ী। সুইপারদের মাতৃভাষা হিন্দি হলেও পাঠ্যবইগুলো বাংলায়। বাংলা বুঝতে না পারায় প্রাথমিক পর্যায়েই ছেলেমেয়েরা ঝরে পড়ে। স্কুলের শিক্ষকেরা ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতির হওয়ার কারণে পড়াশোনা শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে না। সনু রানী বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) পাঠ চুকানোর পরই আমি ও মিনা (সনুর বান্ধবী) ভাবলাম শিক্ষক হতে হবে। 

জানা যায়, কোথাও নামমাত্র পয়সায় আবার কোথাও বিনা পয়সায় কলোনির শিশুদের পড়ান তিনি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন সনু, মিনা দু’জনেই। এখন পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাসূল সা:-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে’ বাবুগঞ্জের স্কুলছাত্রী তামান্না হত্যা মামলার ২ আসামি গ্রেফতার মানিকগঞ্জে সান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকদের টাকা না দেয়ায় মানববন্ধন চট্টগ্রামে পিকআপ ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত ১ ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় দিনেও রাজশাহীর বানেশ্বর হাট আমশূন্য ভালুকায় আইসক্রিম কারখানায় রান্নার সময় পাঁচকের মৃত্যু আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের কর্মপরিধি-সময়সীমা বাড়ছে সিদ্ধিরগঞ্জে চিহ্নিত হয়নি স্বপ্না হত্যার ঘাতক, স্বজনদের মানববন্ধন বান্দরবানে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৭ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে দুঃসংবাদ ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

সকল