৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভুয়া এনআইডিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ

ভুয়া এনআইডিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ - ছবি : সংগৃহীত

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি করে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস (৪২), নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খাঁন (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।

ডিবি জানায়, ভুয়া দলিল ও এনআইডি ব্যবহার করে আরো ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা ছিল চক্রের মূলহোতা জয়নালের। এরপর পরিবার নিয়ে বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তার।

পল্লব দাস রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউট সোর্সিংয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করেন। এ সুবাদে সার্ভারে ঢুকে নাম-পরিচয় ঠিক রেখে পৃথক পৃথক নম্বরে এনআইডি কার্ড তৈরি করে জয়নালকে সরবরাহ করতেন পল্লব। যেসব দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন জয়নাল।

ডিবিপ্রধান বলেন, এই প্রতারক জয়নালের এক সময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকানী ছিলেন। ব্যবসায় লস করে তিনি প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে আরো সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিল। সেসব কাগজপত্র দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঋণ নিতেন।

তিনি আরো বলেন, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতেন। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকতো শুধুমাত্র সেটির নম্বর পরিবর্তন করা। কোনটাতে সে দাড়িসহ ছবি দিতো। আবার কোনোটাতে গোঁফ, কোনোটা দাড়ি-গোঁফ ছাড়া ছবি থাকতো।

একই জমি, একই ফ্লাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন জয়নাল। কিছু ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন আবার কিছু ব্যাংক থেকে তার ঋণ প্রক্রিয়াধীন ছিল। ভুয়া এনআইডি ও দলিল দিয়ে জয়নাল একই নামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছে। যে তার এনআইডিগুলো তৈরি করে দিতেন পল্লব দাস আমরা তাকেও গ্রেফতা করেছি।

হারুন অর রশীদ বলেন, জয়নাল ডিওএইচএসে ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নিয়েছিল। এই একটি অফিসকে সাতটি পৃথক নামে একই ঠিকানায় দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এখন পর্যন্ত জয়নাল বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু তা ফেরত দেননি।

আর এসব টাকায় তিনি ভাটারা এলাকায় একটি সাততলা বাড়ি, উত্তরা, আশকোনাসহ আট থেকে নয়টি ফ্লাট ও মাদারীপুরে বাড়ি করেছেন।

জয়নাল ভুয়া দলিল বানিয়ে জমির নামজারীও করতেন। এরপর খাজনা কপি ভুয়া তৈরি করতেন, এজন্য তাকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রেফতার পল্লবের বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, পল্লব দাস রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউট সোর্সসিংয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করেন। এই সুবাদে তিনি নিজের ইচ্ছামতো সার্ভারে ঢুকে এনআইডি তৈরি করে জয়নালকে সরবরাহ করতেন তিনি। পল্লব প্রতি এনআইডি তৈরি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ করে টাকা নিতেন। তবে পল্লব এনআইডি বানিয়ে দিয়ে কত টাকা উপার্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।

তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। পল্লব দাস আর কতজনকে সার্ভার ব্যবহার করে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছেন আমরা জানার চেষ্টা করবো। এছাড়া জয়নাল আর কোনো ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখবো। পল্লবের সাথে নির্বাচন কমিশনের আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।


আরো সংবাদ



premium cement