২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষ্ণাদের লাগেজ থেকে চুরি দেশের বিমানববন্দরে নয়?

বর্ণাঢ্য আয়োজনে নারী ফুটবলারদের বরণ করে নেয়ার পর এলো বেশ অস্বস্তিকর খবর। - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে গতকালের খবরের কেন্দ্রে ছিল সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন দলের দেশে ফেরার পর তাদের বরণ করে নেবার নানা বর্ণাঢ্য আয়োজন। কিন্তু তারপর এলো বেশ কিছু অস্বস্তিকর খবর।

অভিযোগ ওঠে, ঢাকায় বিমানবন্দরে ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার ও শামসুন নাহারের লাগেজ থেকে বড় অংকের ডলার, কাপড়চোপড় ও অন্য কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার নেপাল থেকে ঢাকায় ফেরার পর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনার কথা জানা যায়।

কৃষ্ণা রানী সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার ৯০০ ডলার এবং শামসুন নাহারের ৪০০ ডলার খোয়া গেছে।

‘আমরা বিমানবন্দরে নামার পর লাগেজ নিজেরা নিতে পারিনি। বাসে উঠে গেছি। ব্যাগের ভেতরে পকেটে দুটো পার্স রাখা ছিল। ফেডারেশনে আমাদের রুমে যাওয়ার পর দেখি পকেটের চেইন খোলা। পার্স ব্যাগের ভেতরেই আছে কিন্তু পকেটের বাইরে এবং দুটোর একটার মধ্যেও কোনো টাকা নেই। কি আর বলবো বলেন,’ বলছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার।

তিনি বলেন, টাকাটা ঠিক কোথায় চুরি হয়েছে তার পক্ষে সেটা বলা মুশকিল।

ঢাকায় ফেরার পর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন কৃষ্ণা। আর ফুটবলারদের লাগেজ সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দেবার দায়িত্ব ছিল ফেডারেশনের কর্মীদের।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিবৃতি
এই ঘটনা তদন্ত করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, বিমান অবতরণ, ব্যাগেজ এলাকায় লাগেজ বহনকারী ট্রলি পৌঁছানো, লাগেজ ড্রপ - এই বিভিন্ন পর্বের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বাফুফের প্রতিনিধি ‘অক্ষত ও তালাবন্ধ অবস্থায়’ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সকল লাগেজ বুঝে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হয়েছেন।

কিন্তু ঢাকায় বিমানবন্দরে লাগেজ থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি যাওয়ার অভিযোগ প্রায়শ শোনা যায়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিভিন্ন পাতায় এ নিয়ে নিয়মিত লেখা হয় এবং ছবি শেয়ার করা হয়।

বাচ্চাদের চকোলেটের গল্প
শুধু কটা চকোলেট খোয়া গেছে এমন কথা শুনলে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেবেন না হয়তো।

কিন্তু মারুফ বারকাতের জন্য ঘটনাটি ছিল বেশ মন খারাপ হওয়ার মতো। বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি গিয়ে টের পেলেন, তার লাগেজ কাটা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ব্রাসেলস থেকে স্টপওভারসহ আমার ঢাকায় আসতে সময় লেগেছিল ১৯ ঘণ্টা। এরপর আবার লাগেজ পেতে ৪৫ মিনিট। লাগেজটা তোলার সময়ই হালকা মনে হচ্ছিল। প্রথমে বুঝতেই পারিনি। বাসায় গিয়ে দেখি ব্যাগের বাইরের দিকে একটা পকেট ছিল, সেটার চেইন খুলে ভেতরে ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে। চুরি শেষে আবার চেইন আটকে দেয়া হয়েছে।’

‘বেলজিয়ান চকলেট বিশ্বব্যাপী খুব বিখ্যাত। বাচ্চাদের জন্য তাই অনেকগুলো চকোলেট এনেছিলাম। এত লম্বা ফ্লাইট পার করে আমি খালি হাতে বাসায় এসেছি। ওদেরকে কিছু দিতে পারিনি আমার কাছে এটাই বড় লস,’ দুঃখ করে বলছিলেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা বারকাত।

খোয়া গেলো স্ত্রীর গয়না, দামি ঘড়ি আর হ্যান্ডব্যাগ
নোয়াখালীর বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলিমান রবিন দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে এক বছর পর দেশে বেড়াতে এসেছিলেন। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে বেশ হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন সেদিন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোলিমান রবিন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘আমার তিনটা লাগেজ ছিল। এর মধ্যে একটা হঠাৎ খেয়াল করি যে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো ছিল তা ছেঁড়া এবং তালা ভাঙা। খুলে দেখি ভেতরে আমার স্ত্রীর জন্য আনা গয়না, একটা দামি ঘড়ি এবং একটা গুচি ব্রান্ডের দামি হ্যান্ডব্যাগ নেই। আমার কিছু জামাকাপড়ও নিয়ে গেছে।’

সোলিমান রবিন বলছিলেন, তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযোগ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন এ নিয়ে অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু তার অভিযোগ নেয়া হয়নি।

‘আমাকে বলা হলো এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকায় বিমানবন্দরে অথবা দুবাইয়ে - যেখানে আমার স্টপওভার ছিল - সেখানে ঘটেছে, ঢাকায় নামার পরে না। আমি যেন সেখানে যোগাযোগ করি। আমি সেদিন খুবই হতাশ হয়েছিলাম। একে তো এতগুলো টাকার মাল হারালাম, তারপর আবার অভিযোগও নেবে না। এটা কেমন কথা?’ আক্ষেপ করে বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে নয় অপর পাশে ঘটছে ঘটনা?
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো: কামরুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, লাগেজ থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরির শতভাগ ঘটনা ঢাকায় নয় বিদেশ থেকেই বিমানে ওঠার সময় ঘটে।

তিনি বলছেন, মূলত সৌদি আরব এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ আশে বেশি।

তার ভাষায়, ‘কাটার অভিযোগগুলো মূলত কার্টনের ক্ষেত্রে বেশি হয়। সৌদি আরব থেকে সম্মানিত যাত্রীরা অনেক সময় জমজমের পানি নিয়ে আসেন। হোল্ড ব্যাগেজে পানি নেয়া নিষেধ। ওইপাশে কার্টনগুলো কেটে পানি বের করা হয়। হজের সময় আমাদের কাছে এরকম শতশত ছবি পাঠানো হয় ওই পাশ থেকে।’

‘লাগেজে আনা যাবে না এমন কিছু থাকলে ইউরোপের দেশে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যদি লাগেজ খোলে তাহলে ভেতরে একটা স্লিপ দিয়ে দেয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো বিমানবন্দরে সেটা করা হয় না।’

তিনি দাবি করছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলে সবগুলোর ক্ষেত্রে ঢাকায় বিমানবন্দরের প্রত্যেকটি জায়গায়, লাগেজ নামানো থেকে শুরু করে বেল্টে তোলা পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়।

যে দেশের বিমানবন্দর থেকে বিমানটি ছেড়েছে সেসব দেশের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা হয়। দেশে বিমানবন্দরে ঢোকার আগে এবং বের হওয়ার সময় সকল কর্মীকে চেক করা হয়।

তাহলে কি বাংলাদেশ অংশে কোনো চুরির ঘটনাই ঘটছে না?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, ‘আমি কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে বলছি না যে এটা জাস্ট আমার ক্লেইম। একদম ফ্যাক্টের উপর ভিত্তি করে বলছি। শতভাগ ঘটনা অরিজিনে ঘটে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল