২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর ঝুলন্ত লাশ : হত্যা না কি আত্মহত্যা?

- প্রতীকী ছবি

অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কথিত স্বামীর বাসা থেকে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন, না হত্যার শিকার হয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রহস্যের মীমাংসা হয়নি। ওই তরুণীর মৃত্যুর পর শাহবাগ থানা পুলিশ এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে কথিত স্বামীর কাছে লাশ হস্তান্তর করে। কিন্তু এটি আত্মহত্যা নয়, বরং ‘অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণীকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল’ বলে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। তবে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, এ বিষয়ে ভিক্টিম পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। এদিকে ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছিল কি না, তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কি না, ষাটোর্ধ কথিত স্বামীর বয়স ও তরুণীর বয়স নিয়ে নানা বিতর্ক ও তোলপাড় চলছে।

নয়া দিগন্তে হাতে আসা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো মানবাধিকার কমিশনের ‘অতি জরুরী’ চিঠিতে তরুণী ও তার কথিত স্বামীর বয়স উল্লেখ করা হয়নি। তবে মানবাধিকার কমিশনে দেয়া অভিযোগে তরুণীর বয়স ২৩ উল্লেখ করা হয়েছে। ওই অভিযোগে কথিত স্বামী (হিসেবে অভিহিত) আবু জাহিদ সেন্টুর বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৬৬। শাহবাগ থানা পুলিশ ওই কথিত দম্পতির বয়সের এই তফাৎ নিশ্চিত করলেও তরুণীর অন্তঃসত্ত্বা থাকা ও তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে না। তাছাড়া মৌসুমী আক্তার নামের ওই তরুণীর বাবার পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় তারা এটিকে অপমৃত্যু হিসেবেই দেখছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হত্যার প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার।

মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে যা বলা হয়েছে
মৌসুমী আক্তার নিহতের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক ফারাহ দিবা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবার পাঠানো হয়। ‘অতি জরুরী’ ওই চিঠিতে ‘অন্তঃসত্ত্বা মৌসুমী আক্তারকে হত্যা করে আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগে লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আবেদন জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার ঘাটপাড় গ্রামের ইউনুছ মোল্লার মেয়ে মৌসুমী আক্তারকে তার কথিত স্বামী আবু জাহিদ সেন্টু হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে মর্মে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনে একটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অভিযুক্ত সেন্টুকে একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি উল্লেখ করে এর আগে একাধিক বিয়ে করার কথা বলা হয় এতে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ১০ জুলাই রাজধানীর ১২/১/ঘ সেগুনবাগিচায় তানাকা টাওয়ারের ১২/১ ফ্ল্যাটে মৌসুমী আক্তারকে আবু জাহিদ সেন্টু হত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরের দিন ১১ জুলাই লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সেন্টু নিজেই লাশ ভিক্টিমের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। এরপর তাড়াহুড়ো করে ওই দিনই নিহতের মা-বাবাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে লাশ দাফন করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে থানায় হত্যা বা আত্মহত্যা- কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, বিষয়টি মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। কাজেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত মৌসুমীর লাশ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের অনুরোধ জানানো হয় মানবাধিকার কশিমনের পক্ষ থেকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে।

সংশ্লিষ্টরা কে কী বলছেন?
শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হওলাদার বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যার প্রমাণ মিললে সেই আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ লাশ হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে লাশের বাবার পরিবারের কেউ আসতে না পারায় স্বামীর কাছে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যাপক তফাৎ, আবু জাহিদ সেন্টুর আগেও একাধিক বিয়ে করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি মওদুত। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আমাদের কাছে মৌসুমী অন্তঃসত্ত্বা বলে মনে হয়নি।’ তবে মৌসুমীর সাথে আবু জাহিদ সেন্টুর আদৌ বিয়ে হয়েছিল কি না, কোনো কাবিন আছে কি না- এমন প্রশ্নে ওসি মওদুত উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমারও সীমাবদ্ধতা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শেই আমি লাশ হস্তান্তর করেছি।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবু জাহিদ সেন্টু বলেন, ‘আমাকে বিপদে ফেলার জন্য কিছু লোক আমার পেছনে লেগেছে। ভিক্টিমের পরিবারের যেখানে কোনো অভিযোগ নেই, সেখানে এটি নিয়ে কি নিউজ না করলেই নয়?’ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে মকসুদপুর থানা থেকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশই ভালো বলতে পারবে।’

অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মকসুদপুর থানার এসআই আমিনুর রহমান বলেন, বিয়ে হয়েছিল কি না বা মেয়েটির বয়স কত ছিল; অন্তঃসত্ত্বা থাকা- না থাকা আমি তদন্ত করছি না। এখানে ভিক্টিম পরিবারের অভিযোগ আছে কি না আমি সেটি তদন্ত করছি। ‘ওই পরিবারেরর কোনো অভিযোগ নেই’।

ভিক্টিম পরিবারের অভিযোগ না থাকার পরও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কেন এটির তদন্ত চাচ্ছে- এমন প্রশ্নে সংগঠনটির উপ-পরিচালক মো: রুহুল আমিন নয়া দিগন্তকে বলেন, হতে পারে ভিক্টির পরিবার কোনো স্বার্থের কারণে চুপ হয়ে গেছে। আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, তারা কথা না বলার পেছনে। কিন্তু এতে তো ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হলো। আমরা চাই, যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, তাই সত্যটা উম্মোচন হোক। যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।’


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল