সবাইকে কাঁদিয়ে গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ’তে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তারা বাঁচাতে পারেননি নুসরাতকে।
পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যখন নুসরাতের লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল হয়। এরপরে তার পরিবারের কাশে লাশ হস্তান্তর করা হলে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়।
নুসরাতের ময়নাতদন্তের সময় তার বোন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফাতিমা তাসহিন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লিখেছেন সেই অবর্ণনীয় মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে। তিনি লিখেন, মেয়েটার পেটে কোনো মাংস নেই, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে, ..., পায়ের নখের লাল টুকটুকে মেহেদী রঙটুকু এখনো চোখে পড়ে।
ফাতিমা তাসহিন’র সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলা হয়েছিল, হুবহু তা-ই তুলে দেয়া হলো নিচে -
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা মেডিকেলে। সকাল সাড়ে ৮টায় হিমাগার থেকে বডিটা বের করে এমারজেন্সি মর্গে নিয়ে গেছে। মৃত মানুষটা মেয়ে হলে তার ময়নাতদন্ত করার সময় মা অথবা বোনের থাকতে হয়। রাফির মা অসুস্থ আর আপন কোনো বোন না থাকায় আমাকে বোন হিসেবে রেখেছিলো ময়নাতদন্তের সময়। মেয়েটার পেটে কোনো মাংস নেই, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে, যৌনাঙ্গ পুড়ে বীভৎস অবস্থা, পায়ের নখের লাল টুকটুকে মেহেদী রঙটুকু এখনো চোখে পড়ে।
রাফির মা ভীষণ অসুস্থ গতকাল রাত থেকে, মেয়ে মারা যাওয়ার পর শেষবার একটু দেখতেও পারেননি। আঙ্কেল শোকে পাথর হয়ে গেছে আর মা মা বলে চিৎকার।
ভাই দুইটা একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। মর্গের সামনে দুই-তিনশো সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছে, নেই শুধু রাফি।
কান্না থামিয়ে রাখতে পারেননি প্রধানমন্ত্রীর পিএস , মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যানও। অ্যাম্বুলেন্সে করেই এসেছিল ঢাকায়, আবার ফিরেও যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে।
বোন, পৃথিবীর চেয়ে ভালো জায়গায় থাকবি নিশ্চয়ই। আমরা যেই নরকে আছি সেখানে এখনও তোর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে, তোর পক্ষে কথা না বলার জন্য আদেশ দিচ্ছে, তোর পাশের এলাকায় গতকাল রাতে তোর মত করে আরেকটা ছেলের গায়ে আগুন দিয়েছে।
আহ! কী সুন্দর! তুইই ভালো আছিস নরক থেকে চলে গিয়ে। শেষবার তোকে লাইফ সাপোর্টে দেখে আসলাম , গতকাল ব্ল্যাড ম্যানেজ করে দিলাম নয়ব্যাগ। আর যেতে হবে না তোকে দেখতে, রক্ত দিতে....। ক্ষমা করিস না আমাদেরকে!
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। এমন সময় মাদরাসার এক ছাত্রী ‘তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে’- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই ভবনের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি তাতে অস্বীকৃতি জানালে তারা কেরোসিন ঢেলে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে যায়।
গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
এদিকে মাদরাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা হয়। গত সোমবার সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। মামলার সংশোধিত এজাহারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা