০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তিনি ডব্লিউ জি গ্রেস

ডব্লিউ জি গ্রেস - ছবি : সংগ্রহ

'ছোকরা.... লোকজন নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে, তোমার বোলিং নয়।'

ধেয়ে আসা বলটা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হবার ফলে স্ট্যম্প ছত্রখান। তবুও ২২ গজে দাঁড়িয়ে যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিমায় বলটা বোলারের কাছে পাঠিয়ে উচ্চস্বরে এভাবেই বলে উঠলেন, ক্রিকেট ইতিহাসে 'পিতামহ' খ্যাত সেই ডব্লিউ জি গ্রেস। যাকে বলা হয়, ব্যাটিং শিল্পের সূতিকাগার শিল্পী!

না! একবিন্দু মিথ্যে বলেননি গ্রেস। পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে ব্রিটিশ মুলুকে তখনকার সময়ে রানির পর দ্বিতীয় সেরা জনপ্রিয় ব্যক্তিটিই তিনি। যে ম্যাচে তিনি খেলতেন সেই ম্যাচের আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। আয়োজকরা টিকেটের মূল্য দিত বাড়িয়ে। কিন্তু তবুও শুধুই তার ব্যাটিং উপভোগের উদ্দেশ্যে লোকজন মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে চলে আসত মাঠ-প্রাঙ্গনে।

তাকে নিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় অনেক মজার ঘটনার প্রচলন রয়েছে। এই যেমন, একবার ডব্লিউ জি গ্রেস ৯৯ রানে ব্যাট করছেন। বোলার যখন বল ছুঁড়লেন তিনি স্ট্যাম্প থেকে সরে গেলেন। ফলাফল বোল্ড আউট। সতীর্থ খেলোয়াড়েরা যখন জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এ কাজ করলে কেন? ডব্লিউ জি গ্রেসের জবাব, আমি ৮২টা সেঞ্চুরি করেছি কিন্তু কখনো ৯৯ রানে আউট হইনি। তাই আজকে ৯৯ রানে আউট হয়ে দেখলাম কেমন লাগে। তাছাড়া একবার নাকি তিনি যখন ৯৩ রানে ব্যাটিং করছেন, তখনই তিনি ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন। এমন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ০ থেকে ১০০ সব রানই করেছি, কিন্তু ৯৩ কখনই করিনি। সেই জন্যই আজ এমন কাজ করেছি।

আরেকটা অদ্ভুত ঘটনাও শোনা যায়। সালটা তখন নাকি ১৮৭৬। গ্রেস তার সেরা ফর্মে। তাকে থামাতে তাই এক ম্যাচে ১১-এর বিরুদ্ধে ২২ জনের দল গড়া হলো। গ্রেস সাহেব তাতেই রাজি। তিনি ক্রিকেটের সৃষ্টিকর্তা পিতামহ ব্রহ্মা। তার কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই। তিনি ২২ জনের বিরুদ্ধেই ব্যাট হাতে নেমে পড়লেন। ২২ ফিল্ডারদের এড়িয়ে তার শট ছুটতে লাগল। রান আর রান। ফ্রণ্ট আর ব্যাকফুট দুটিতেই তিনি শট খেলতেন। ২২ জনের মাঝেও তিনি ঠিক ফাঁক খুঁজে নিতে লাগলেন। ভাবুন কী কাণ্ড !

তবে অবাক হবার এখনো বাকি। ২২ জন ফিল্ডারের বিরুদ্ধে সেবার কত রান করেছিলেন জানেন? ৪০০! আদতে ৩৯৯। তবে বিপক্ষ দল গ্রিমসবীর দাবি যে ওটা ৩৯৯ ছিল । কথিত আছে, আগের দিন গ্রেসের দ্বিতীয় পুত্র হয়েছিল বলে স্কোরার তাকে ১ রান উপহার দিয়ে দেন। তবে শোনা যায়, স্কোরারকে জোর করে বাধ্য করেছিলেন ৪০০ লিখতে। আরেকবার গ্রেস প্রথম বলে আউট হয়ে গেলেন। সাথে সাথেই জি গ্রেস বলে উঠেন, 'ট্রায়াল বল হিসেবে ভালই ছিল । এবার তবে খেলা শুরু করা যাক।'

তবে সব থেকে মজার যেই গল্প প্রচলিত আছে, তা হলো, একবার গ্রেসের বিপক্ষে একটাও লেগ-বিফোর আবেদন গ্রাহ্য করছিলেন না আম্পায়ার। প্রচণ্ড হতাশ ও রাগন্বিত বোলার বোল্ডই করে বসলেন গ্রেসকে। তবুও আবার দুটি স্ট্যাম্প দু'দিকে উপড়ে ফেলে দেন বোলার। বোলার তখন রসিকতা করে বলে উঠেন, 'এখনো একটা স্ট্যাম্প দাঁড়িয়ে আছে। তুমি নিশ্চয়ই যাবে না, ডক্টর?' মুচকি হেসে গ্রেস কি উত্তর দেন, 'এতে আর আশ্চর্যের কী আছে!' অতঃপর আবার ব্যাটিং করতে দাঁড়িয়ে গেলেন জি গ্রেস।

একদিন নাকি আউট হয়ে যাওয়ার পর জি গ্রেস আম্পায়ারের কাছে গিয়ে বলছিলেন, 'আসলে বাতাস একটু জোরে হওয়ায় বেলটা পড়ে গেল।' আম্পায়ারও জবাবে বলেছিলেন, 'বাতাসটা আরেকটু জোরে হলে তোমালে ড্রেসিংরুমে পৌঁছতে সাহায্য করতে পারবে।'
বল হাতেও রসিক ছিলেন গ্রেস। সূর্যের দিকে তাকিয়ে ব্যাটসম্যানকে বলতেন, 'আকাশে কত পাখি উড়ে যাচ্ছে, দেখো।' ব্যাটসম্যান তাকাত, যার ফলে তার চোখে ধাঁধা লেগে যেতো। সেই সুযোগে গ্রেস তাকে আউট করে দিতেন।

ক্যারিয়ারে মাত্র ২২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন গ্রেস। আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮৭০ ম্যাচে খেলে গ্রেসের সংগ্রহ ৫৪ হাজার ২১১ রান। ২ হাজার ৮০০-এরও বেশি উইকেট আর ৮৭০টির অধিক ক্যাচ। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরিরও মালিকও গ্রেস। গ্রেসকে ঠিক পরিসংখ্যানে বোঝানো যায় না। ঊনিশ শতকের শেষের দিক থেকে বিশ শতক পর্যন্ত এমন বাজে উইকেটে তাকে খেলতে হয়েছে, এখনকার সময়ে রীতিমতো যা দুঃস্বপ্ন।

১৮৪৮ সালের ১৮ জুলাই ব্রিস্টলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম, উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস। পারিবারিক প্রথা মেনে 'মানবসেবা'কে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও গ্রেসের ধ্যানজ্ঞান ছিলোশুধুই বাইশগজ। ক্রিকেটের নানান কৌশলগত দিক উদ্ভাবনে তার প্রভাব অনেক। ক্রিকেট ছাড়াও অ্যাথলেটিকস, ফুটবল এমনকি গলফেও নিজের প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন গ্রেস।

– শুভ জন্মদিন ডব্লিউ জি গ্রেস!

 


আরো সংবাদ



premium cement