২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী বেকার শ্রমিক বাড়ছে

হাইকমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
-


বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে মারাত্মক টেনশনে থাকতে হচ্ছে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের। বৈধভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠানোর পরও অনেকেই গিয়ে চুক্তি মোতাবেক কাজ পাচ্ছেন না।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশী বেকার শ্রমিকের সংখ্যা অনেক রয়েছে বলে স্থানীয় কমিউনিটি বাংলাদেশীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব শ্রমিক বিপদে পড়ার পেছেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন অভিবাসন ব্যবসায়ী অনেকেই। গতকাল কুয়ালালামপুর থেকে একজন ব্যবসায়ী শ্রমবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, বেশ কিছু ভুয়া অ্যাপ্রুভাল বের হয়েছে। ওইগুলো একাধিকবার বিক্রি করছে স্থানীয় এজেন্টরা। যারা তাদের ফাঁদে পা দিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, এখন তাদের লোকগুলোই মালয়েশিয়াতে এসে বেকার বসে আছে। অনেকে কাজ করার পরও বেতন পাচ্ছে না। এর জন্য আমাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনও দায় এড়াতে পারে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন কিছুদিন আগে একটি কোম্পানির ৪০০ শ্রমিকের কাজ না থাকা এবং বেতন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওই শ্রমিকরা তাদের সমস্যা সমাধানের দাবিতে হাইকমিশনে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেটি সমাধান হয়েছে কি না তা জানতে পারিনি।
তার মতে, এ টু বি ক্যাটাগরির লোকগুলোই এখানে সবচেয়ে বিপদের মধ্য আছে।

এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীল একজন নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, কি আর বলব। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আমাদের এখন সারাক্ষণ থাকতে হচ্ছে টেনশনে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে শ্রমিকগুলো এসেছে তাদের মধ্য বেশ কিছু শ্রমিক এখনো বেকার বসে আছে। তাদের কাজ নাই। খাবারের কষ্ট। টাকা খরচ কইরা আসার পর বেকার থাকলে কেমন লাগে?
কী পরিমাণ শ্রমিক বেকার আছে জানতে চাইলে ওই কমিউনিটি নেতা বলেন, ক্লাং এ ২০০০ শ্রমিক বেকার আছে বলে খবর পেলাম। জালান আমপাং, পেনাং, শাহআলমসহ অনেক এলাকায় শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন। তাদের বিষয়গুলো সমাধানে ব্যবস্থাও চলমান আছে বলে জানান তিনি। সমস্যায় থাকা একটি কোম্পানির ৪০০ শ্রমিক দলবেঁধে হাইকমিশনে গিয়েছিল। সেই ওয়ার্কারদের ভিডিও ফেসবুকে এসেছিল। তাদের সমস্যা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। খোঁজ নেন তাহলে জানতে পারবেন। যোগ করেন তিনি।
তবে এসব ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিভাগের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের সাথে একাধিকবার কথা বলার পর তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ৪০০ শ্রমিকের হাইকমিশনে আসার বিষয়টি অনেক আগেই মীমাংসা হয়েছে। এটা ছিল ত্রিপক্ষীয় সমস্যা। কর্মীদের সত্যায়ন দেয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাইকমিশন থেকে যাচাই-বাছাই না করে সত্যায়ন করার কারণে কর্মীরা এসে বিপদে পড়েছে। এর দায় হাইকমিশন কোনোভাবে এড়াতে পারে না বলে সচেতন ব্যবসায়ীদের দাবি। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোম্পানিতে কাজের সুযোগ আছে ১০০ জনের। কোম্পানি ৫০০ জনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এই সমস্যা দিন যত যাচ্ছে ততই প্রকট হচ্ছে।
হাইকমিশনের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটা সত্যায়ন বাবদ দালালরা ১০০ থেকে ১৫০ রিংগিট আদায় করছে। গ্রুপ এর ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা হাইকমিশনে সত্যায়ন করানোর বিষয়ে বলেন, কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব দালাল চক্র দিয়ে টাকার বিনিময়ে অ্যাটাস্টেট দিচ্ছেন। টাকা না দেয়া পর্যন্ত এই সমস্যা, ওই সমস্যা, ঝামেলা আছে, বলে দেখান। পরে টাকা দিলে সব ঠিক হয়ে যায়।
তিনিও বলেন বর্তমানে অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়াতে সমস্যার মধ্য আছে এটা সত্য কথা। তবে কোন মালিকের কতজন সমস্যায় আছে সেটা হাইকমিশন এবং আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
লোক পাঠানোর আগে দেখে শুনে পাঠানো দরকার। এতে যেমন দেশের সুনাম হয় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে আত্মমর্যাদাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তখন লোক পাঠিয়ে অফিসে আর ঝামেলা, টেনশনে থাকতে হবে না। মালয়েশিয়ার মার্কেট আমাদের নিজেদের স্বার্থে টিকিয়ে রাখতে হবে। যোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।


আরো সংবাদ



premium cement