১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

১৯০০ শিক্ষকের চাকরি ১০ বছরেও নিয়মিত হয়নি

-

দীর্ঘ ১০ বছরেও চাকরি নিয়মিত হয়নি আত্তীকৃত বিভিন্ন কলেজের ১৯০০ জন শিক্ষকের। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং কলেজ সরকারি হওয়ার পর নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই শিক্ষকদের। একই সাথে দিনের পর দিন এসব শিক্ষক পদে পদে নানা বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছেন। আত্মীকরণের ১০ বছর পার হলেও অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরি নিয়মিতকরণ করা হচ্ছে না। আবার প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা অর্জন এবং বয়স পঞ্চাশোর্ধ হলেও বছরের পর বছর ধরে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। জুনিয়ররা পদোন্নতি পেলেও আত্তীকৃত যোগ্য সিনিয়র শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক ফোরামের (বাসকশিফো) নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও কোনো সাড়া মিলছে না। সময়ক্ষেপণ করায় ইতোমধ্যেই অসংখ্য শিক্ষক নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি ছাড়াই চাকরিজীবন শেষ করে খালি হাতেই অবসরে চলে যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কর্মকর্তা সরকারের সব অর্জন ও সফলতাকে পেছনে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা শিক্ষাকে ধ্বংস করে সরকারের ভিশন-২০৪১ এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে চায়। সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকর্তাদেরকে চিহ্নিত করে অধিদফতর থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। একই সাথে মাউশির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে নিয়মিতকরণ বঞ্চিত কর্মকর্তাগণকে (প্রভাষকদের) আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়মিতকরণ ও স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া কোনো কলেজের শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিতকরণ না হওয়া পর্যন্ত সংযুক্তিতে বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগকৃত কোনো কর্মকর্তাকে জাতীয়করণকৃত কোনো কলেজে পদায়ন না করা, ইতোমধ্যে যাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে তাদেরকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী ভূতাপেক্ষভাবে কলেজ জাতীয়করণের তারিখ থেকে সব কর্মকর্তাকে নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করা, নিয়মিতকরণ ছাড়া সব আত্তীকরণকৃত কর্মকর্তাকে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া এবং বেতন নির্ধারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন ১৯৯৪ অনুযায়ী কলেজ কর্তৃক দেয় বার্ষিক বর্ধিত বেতন যোগ করে বেতন নির্ধারণ করা অর্থাৎ প্রটেকশন নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হোছাইন মুহাম্মদ জাকির জানান, ১৯৮১ বিধিতে আত্তীকৃত ১৮ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষকদের দায়েরকৃত একটি মামলার রায়ের অপব্যাখ্যা করে ২০০০ বিধিতে নিযুক্ত আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে অহেতুক ওই মামলার সাথে জড়িয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ তারা কেউ ওই মামলার পক্ষভুক্ত নন এবং ১৯৮১ বিধিতে আত্তীকৃতদের সাথে তাদের বিধিগত কোনো মিল বা সম্পর্কও নেই।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের দাবিতে সমাবেশ
অন্য দিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবিতে সমাবেশ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। গতকাল শনিবার সরকারিকরণসহ মোট পাঁচ দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সংগঠন বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ। সহকারী প্রধান শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সমিতির নেতারও সমাবেশে অংশ নেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে শিক্ষকরা পাঁচ দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহ-প্রধানদের যথাক্রমে ষষ্ঠ গ্রেড এবং সপ্তম গ্রেড দেয়া, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের চাকরি জীবনে দু’টি উচ্চতর স্কেল দেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা, পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা দেয়া, ঐচ্ছিক বদলি ব্যবস্থা চালু করা এবং মাধ্যমিক স্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী, সহকারী প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম অপু, সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, বাবু রামচন্দ্র মিত্র, ফেরদৌস হেলাল, আব্দুর রশিদসহ অনেকে।


আরো সংবাদ



premium cement