২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাইপাসসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ হচ্ছে ৪ লেনেই

-

চারটি বাইপাস ও একটি ফ্লাইওভারসহ বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ হচ্ছে চার লেনেই। তবে সড়ক ও বাইপাস উভয়ই হবে এক্সেস কন্ট্রোলড হাইওয়ে হিসেবেই। বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত এই প্রকল্পটি অবশেষে বাস্তবে আলোর মুখ দেখবেÑ এমনটাই আশা করা হচ্ছে। ১২৬ কিলোমিটার মহাসড়কটি দুই পাশে সার্ভিস লেইনসহ চার লেনে উন্নীতকরণে (বাইপাস ও ফ্লাইওভার ছাড়া) সম্ভাব্য ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সওজের চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন।
তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন আগামী ৬ তারিখ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকার প্রতিনিধিসহ সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈঠক রয়েছে। আশা করা হচ্ছে ওই বৈঠকেই মহাসড়ক উন্নীতকরণ বিয়টি চূড়ান্ত হবে। এর আগে এই মহাসড়কটি জিটুজির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য জাপানের মারুবেনির সাথে এক প্রকার সবঝোতা হয়েই ছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দিয়ে মহাসড়ক উন্নীতকরণের জন্য সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। যা গত বছরের ডিসেম্বরে পাবালিক পার্টনার শিপ (পিপিপি) অথরিটির কাছে দাখিল করা হয়। পরে সমীক্ষা প্রতিবেদনটিকে আরো উন্নীতকরণের জন্য বলা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা আবার যাচাই-বাছাই করে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি দাখিল করেন।
গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পাবলিক পার্টনারশিপ অথোরিটির (পিপিপি) মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাসার জানান, ওই প্রকল্পটি জিটুজির মাধ্যমে আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি জানান, বাস্তবতার আলোকে জাইকার সাথেই এই মহাসড়কটির উন্নীতকরণ করা সমীচীন হবে। কেননা জাইকার সাথে যৌথ অর্থায়নে ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি ছাড়াও এই মহাসড়কে পাঁচটি পয়েন্টে ফ্লাইওভারসহ বাইপাস নির্মাণ করা হচ্ছে সে কারণে বাস্তবতার আলোকেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, সকারের বাস্তবায়নাধীন অগ্রধিকার প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পে এশিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ (এশিয়ান কানেন্টিভিটি জোরদার করণ) ভারত মিয়ানমার ও চীনের সাথে সরাসরি আধুনিক সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মহেশখালী ইকোনমিক জোন, সোনাদিয়া টুরিজম পার্ক, সারবরাং টুরিজম পার্ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, মাতারবাড়ি বন্দর, মাতারবাড়ি ও বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ বাস্তবায়ন হচ্ছে। চালু হচ্ছেÑ পদ্মা ব্রিজ, কাজ চলছে পায়রা পোর্ট, মহেষখালী পোর্ট। এ ছাড়া মিরসরাই ইকোনমিক জোনসহ দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠছে আরো অনেক ইকোনমিক জোন সে কারণে খুবদ্রুত দেশী-বিদেশীদের বিনিয়োগ বাড়ছে সেই সাথে দ্রুত গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা সে কারণে যোগাযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে যাবে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা।
মাতারবাড়ি থেকে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম আবার চট্টগ্রাম থেকে মাতারবাড়ি কক্সবাজার যাওয়া আসার ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত ট্রাফিক হবে তা নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় একটি ভূমিকা রাখবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সে কারণে এই মহাসড়কের কক্সবাজার পয়েন্ট থেকে পটিয়া ক্রসিং পর্যন্ত ১৩২ কিলোমিটার মহাসড়ককে তৈরি করা হবে অত্যাধুনিকভাবে। সরকারের ১০০ বছরের যে ডেল্টা প্লান রয়েছে তারই একটি অংশ হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীতকরণ করে গড়ে তোলা।
এই মহাড়ককে চার লেন ও ছয় লেন (এক্সেপ্রেস ওয়ে) করে একই সাথে দু’টি সমীক্ষা প্রস্তত করা হয়েছে। সমীক্ষায় মহাসড়কের সম্পূর্ণ অংশ উড়াল সড়ক করার কথা বলা হয়েছে আবার কিছু অংশ উড়াল ও কিছু অংশ এলিভেটেড করার সুপারিশ করা হয়েছে। সমীক্ষার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এই মহাসড়কের ইন্টার চেঞ্জঃ স্থাপন করা হবে প্রথমে সাতটি পরে আরো তিনটি বৃদ্ধি করা হবে। প্রথম সাতটি হচ্ছে পটিয়া ও পটিয়ার শিকলবাহা, কেরানীহাট, আলীকদম, রামু মাতারবাড়ি ও টেকনাফ পরে যেখানে হবে সেগুলো হলো দোহাজারী লোহগাড়া ও ঈদগাঁও এলাকায়। এ ছাড়া এই মহাড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস ও একটি ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছেÑ পটিয়া দোহাজারী, লোহাগাড়া, চকোরিয়ায় বাইপাস ও কেরানীহাটে হচ্ছে ফ্লাইওভার। ইতোমধ্যে জাপানের অপর একটি প্রতিষ্ঠান বাইপাস স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। অপর দিকে জাইকার অর্থায়নে ইতোমধ্যে মহাড়কের উন্নয়ন কল্পে ইতোমধ্যে মহাসড়কের পটিয়া চানখালী খাল কক্সবাজারের মাতামুহুরি নদী চন্দনাইশের শঙ্খ ও বরুমতি খালের উপর ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ বেশ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরেই দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১৩২ কিলোমিটার সড়ক রূপান্তর করা হচ্ছে এক্সেস কন্ট্রোলড হাইওয়েতে (এক্সপ্রেসওয়ে)।
২০১৮ সালের ২৫ মে নয়া দিগন্তে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প প্রোফাইল পরিকল্পনা কমিশনে শিরোনামে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এ ছাড়া এই মহাসড়ক নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯-২১ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২০, ১১ সেটেম্বর ২০২১, ১ ডিসেম্বর ২০২১ এবং সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে এ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ সমীক্ষা শেষ পর্যায়ে শিরোনামে নয়া দিগন্তে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। জানা গেছে, এডিবির অর্থায়নে সর্বপ্রথম ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুইডিস কনসালটেন (ঐওঋঅই) নামে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের সর্ব প্রথম সার্ভে কাজ করেছিল। এরপরই ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে বর্তমান সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। তারাই ধারাবাহিকতায়, অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে।
এ ব্যাপারে সওজের চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মহাসড়কের ১২৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ হচ্ছে। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
ওই প্রকল্পের পিডি প্রকৌশলী শ্যামল কুমার ভট্টাচার্জ নয়া দিগন্তকে বলেন, মহাসড়কে চারটি বাইপাস ও একটি ফ্লাইওভারের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। আগামী আগস্টে যৌথ বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকের পরেই জানা যাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয়।


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল