২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারের নজরের বাইরে স্কুল পড়–য়া ৭০ লাখ শিশু-কিশোর

মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিতে চায় ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’
-

স্কুলের নির্দিষ্ট তালিকা নেই। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অজানা। ফলে তদারকির সুযোগও কম। অথচ দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে এই বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর। তারা এখনো সরকারের নজরের বাইরে। প্রাথমিক এক জরিপে দেখা গেছে, এখনো সরকারের নজরের বাইরে রয়েছে ৭০ লাখ শিশু শিক্ষার্থী। নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করায় এসব শিশুর সরকারিভাবে সঠিক তদারকিও করা যাচ্ছে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে থাকায় এসব শিক্ষার্থীর পাঠ্যসূচি ও মেধার যথাযথ মূল্যায়নেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিতামাতার অজ্ঞতা কিংবা দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে এসব শিশু-কিশোরকে বিপথগামী করারও অভিযোগ আসছে। সরকার ঘোষিত মূল শিক্ষাকার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত না থাকায় বিপুলসংখ্যক এই শিশুর শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে এখনো অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। মেজরিটি-সংখ্যক শিশু শিক্ষার্থীকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির বাইরে রেখে কোয়ালিটি এডুকেশন (মানসম্পন্ন শিক্ষা) নিশ্চিত করা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়।
অথচ এই শিশু-কিশোরদের সরকারের নজরে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এই শিশু-কিশোরদের মনিটরিং বা তদারকির দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী খোদ সরকারেরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’। গত প্রায় এক দশক ধরেই এই ইউনিটের চৌকস ও দক্ষ ৫৫ জনের জনবলকাঠামো কাজ পাচ্ছে না। ২০১৩ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকেই মূলত অলস সময় পার করছে পুরো ইউনিট। গুটিকয়েক মামলা পরিচালনা ছাড়া অন্য কোনো কাজই নেই তাদের।
সূত্র মতে, ২০১৩ সালের পর দীর্ঘ ৯ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ছাড়াই অলস সময় কাটাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’-এর ৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। অথচ শিক্ষাস্তরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিকের বিভিন্ন বিভাগে সরকার এই মেধাবী, অভিজ্ঞ ও চৌকস জনবলকে কাজে লাগাতে পারে। সরকারের নজরের বাইরে থাকা এসব শিক্ষার্থীকে তদারকির দায়িত্ব ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’কে দেয়া হলে তারা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের এক কর্মকর্তা গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের এখানে জনবলকাঠামো ৫৫ জনের। অথচ কাজ নেই। সরকারের নির্দেশনা মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের অবসর ও ভাতাসংক্রান্ত মামলা পরিচালনা ছাড়া আর কোনো কাজেই নিজেদের মেধা আর যোগ্যতা কাজে লাগাতে পারছেন না তারা। যদিও দক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল থাকার পরেও শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের অভাবে অবসর সময় পার করছেন এই ইউনিটের ৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ইউনিটের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের ২১ আগস্ট সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কোষ গঠন করে। পরবর্র্তী সময়ে এই বিভাগের নামকরণ করা হয় (১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর) ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এই বিভাগটি মন্ত্রণালয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানকার নিয়োগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে স্থানাভাবে শিক্ষাভবনে এই বিভাগের সামগ্রিক কাজকর্ম পরিচালিত হয়ে আসছে।
শুরুতেই এই বিভাগের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন-১৯৯০ কার্যকর করার লক্ষ্যে সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষায় গমনোপযোগী সব শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণসহ তাদেরকে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়া। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এই কাজের জন্য এই জনবলকাঠামোতে ৫৫ জনকে নিযুক্ত করা হয়। জনবলকাঠামোতে এখানে রয়েছেন কর্মকর্তা ১৪ জন আর কর্মচারী ৪১ জন।
সূত্র জানায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ১৯ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীর ২২ জন। মোট ৫৫ জন। এই জনবলের বেতনভাতা বাবদ প্রতি মাসে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হয়। সেই হিসাবে বছরে ব্যয় হয় এক কোটি ৮৯ হাজার। অর্থাৎ গত ৯ বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো কাজ বা দায়িত্ব পালন ছাড়াই সরকারকে গচ্ছা দিতে হয়েছে ১৭ কোটি টাকার বেশি।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়ন অগ্রগতি সমন্বয় পরিবীক্ষণ ও পর্যালোচনা, প্রাথমিক শিক্ষাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারকাজে নিয়মিতভাবে তদারকি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এই বিভাগ। একই সাথে আইন অনুযায়ী, সারা দেশের শিশু শিক্ষা ও সাক্ষরতা জরিপ পরিচালনা শিশুদের তালিকা প্রণয়ন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ জাতি গঠনমূলক সংস্থার সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা, গণমাধ্যমে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত প্রচার, রেজিস্টার্ড/কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ প্রদান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করত এই বিভাগ।
এ ছাড়াও সরকারি রেজিস্টার্ড কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাঠপর্যায়ের অফিগুলো পরিদর্শন, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এনজিও’র মাধ্যমে পরিচালনার ব্যবস্থাকরণ, সারা দেশে চালু না হওয়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এনজিও’র মাধ্যমে পরিচালনার ব্যবস্থা করা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সার্বিক সহায়তা প্রদান করত নিয়মিত।
মূলত ২০১৩ সালের পর থেকেই অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন এই বিভাগের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমানে এমপিওভুক্ত রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ফলে বিদ্যালয় ও শিক্ষক সংক্রান্ত মামলা সরকারের পক্ষে পরিচালনা করা ছাড়া আরো কোনো কাজই নেই এই বিভাগের। অতিরিক্ত কাজের মধ্যে রেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বা মৃত্যুবরণ করা শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এককালীন আর্থিক সুবিধা প্রদানের কাজে সহায়তা করছে। আর মামলা পরিচালনা হচ্ছে ঢিমেতালে। বতর্মানে এই ইউনিটের পরিচালনাধীন মামলার সংখ্যা মাত্র ৮৭টি। আর এই মামলাগুলো পরিচালনার জন্য দুই থেকে তিনজন কর্মকর্তাই যথেষ্ট।
সম্প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে, এমপিওভুক্ত রেজিস্টার্ড বেসরকারি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পর ইউনিটের কার্যক্রম কমে যাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির ডিপিপিতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটকে রূপান্তর করে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়ছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২০-এর খসড়া চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ চূড়ান্ত করে ইউনিটের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ চাকরির সব সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আবু ইউসুফ ভূঞা গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’ বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো বেশ কিছু কাজ করছে। তবে এই ইউনিটকে আরো গতিশীল করতে আরো কাজ দেয়া হবে। এই ইউনিটে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ। আমরাও চিন্তা করছি কিভাবে এই ইউনিটকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে হয়তো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অবশ্য এর আগে (করোনাকালে) বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনগুলো মনিটরিংয়ের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের (কিন্ডারগার্টেন) দায়িত্ব নিতে পারব না। তিনি আরো বলেছিলেন, করোনায় কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারিভাবে কোনো অনুদান বা প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই। অর্থাৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরকার কোনো দায়িত্ব নিতে বরাবরই অপারগতা প্রকাশ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু

সকল